ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ৬ মাস ১৬ দিনে অর্থাৎ ২৬ সপ্তাহে জন্ম নেয়া শিশুকে মৃত মনে করে দাফন করতে নিয়ে যান বাবা। কিন্তু কবর খোঁড়ার শেষ পর্যায়ে শিশুটি কান্না করে উঠলে ফের হাসপাতালে নিয়ে আসেন বাবা ইয়াসিন।
এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান করা হয়েছিল নবজাতক ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক মনিষা ব্যানার্জিকে।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির প্রধান বলেন, আমাদের দেশে ২৮ সপ্তাহের নিচে কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। এ শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়েছে ২৬ সপ্তাহে। আমরা তাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে আগের থেকে এখন অনেকটা ভালোর দিকে। তবে এখনও আশঙ্কাজনক। তাকে অক্সিজেনের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। দু-একদিন পর অল্প অল্প করে খাবার দেয়া যাবে। এ সব শিশুর যেকোনো সময় অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাকে বাঁচানোও মিরাকল (অলৌকিক) হবে। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়েছে অপরিপক্ব ২৬ সপ্তাহে।
তদন্ত কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ডেলিভারি হওয়ার পর শিশুর স্পন্দন ছিল না। আমাদের চিকিৎসকদের অবহেলা ছিল না। তারা ৪৫ মিনিট অবজারভে (পর্যবেক্ষণ) রেখেছেন, তার পরও কোনো স্পন্দন না পেয়ে মৃত ঘোষণা করেন। যেহেতু শিশুটি কবরস্থানে গিয়ে নড়েচড়ে উঠেছে, এর দায়ভার এড়ানো যায় না। চার সদস্যের তদন্ত কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে, আমরাও কিছু সুপারিশ করেছি।
ঢামেকের পরিচালক বলেন, নড়েচড়ে ওঠা শিশুটিকে তার বাবা যখন পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন, তখন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে নবজাতক ইউনিটে পাঠান। সেখানে ওয়ার্ডবয়সহ কয়েকজন তাকে বলেছিলেন, এখানে রাখা যাবে না, অন্যত্র নিয়ে যান। প্রায় এক ঘণ্টা এভাবেই অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা অবহেলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নবজাতক ইউনিটে সব সিট ফাঁকা থাকে না। তারপরও যখন আমি বিষয়টি শুনেছি, তাৎক্ষণিক ওই বিভাগের প্রধানকে ফোন দিয়েছি। তখন তিনি যেভাবেই হোক আরেকটি শিশুকে অন্যত্র শিফট করে এই শিশুটিকে ভর্তি করেন।
এদিকে, গত বুধবার (১৪ অক্টোবর) ছয় মাস ১৬ দিনের অন্তঃসত্ত্বা অসুস্থ স্ত্রী শাহিনুর বেগমকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন নবজাতকটির বাবা বাসচালক ইয়াসিন। তাকে গাইনি বিভাগের ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকরা জানান, তার প্রেশার অনেক হাই। শিশুটি ডেলিভারি না করালে তার প্রেশার কমবে না। চিকিৎসকদের কথায় সম্মতি দেয়ার পর ওইদিন রাতেই তাকে লেবার রুমে নিয়ে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হয়। ডেলিভারি না হওয়ায় তাকে ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা দুদিন চেষ্টার পর গতকাল ভোরে তার আবার ব্যথা শুরু হয়। এরপর ভোর পৌনে ৫টার দিকে তার স্ত্রী এক কন্যাসন্তান প্রসব করেন।
চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি মৃত অবস্থায় হয়েছে। এরপর হাসপাতালের আয়া মৃত শিশুটিকে প্যাকেটে করে বেডের নিচে রেখে দেন এবং কোথাও নিয়ে দাফন করার জন্য বলেন।
সকাল ৮টার দিকে নবজাতকটির বাবা ইয়াসিন নবজাতককে দাফন করার জন্য আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যান। সেখানে এক হাজার ৫০০ টাকা সরকারি ফি দিতে না পারায় তাদের পরামর্শে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নিয়ে যান। সেখানে ৫০০ টাকা ফি ও কিছু বকশিশ দেয়ার পর মৃত নবজাতকটির জন্য কবর খোঁড়া শুরু হয়। কবর খোঁড়ার শেষ পর্যায়ে শিশুর কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পান। তিনি আশপাশে কোথাও কিছু না পেয়ে পরে পাশে রাখা নবজাতকটির দিকে খেয়াল করেন। এরপর প্যাকেট খুলে দেখেন শিশুটি নড়াচড়া ও কান্নাকাটি করছে। পরে নবজাতককে দ্রুত আবার ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং চিকিৎসকরা দেখে নবজাতক বিভাগে ভর্তি করেন।