রংপুরে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রায়হানুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মহানগর পুলিশ লাইন্স থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে নগরীর পিবিআই কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এর আগে দুইদিন ধরে রায়হানকে পুলিশের নজরদারিতে রাখা রাখা হয়েছিল।
এদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে তাঁরা জবানবন্দি দেন। তার আগে একই আদালতে ২২ ধারায় স্কুলছাত্রীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয় এবং আসামিদের শনাক্ত করে আদালতে ঘটনার বিবরণ দেন ওই ছাত্রী।
স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত মঙ্গলবার ভোরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পূর্ব মাজাপাড়া এলাকার বাবুল হোসেন (৩৮) ও পূর্ব থানাপাড়ার আবুল কালাম আজাদকে (৪০) গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর মহানগরের ময়নাকুঠি কচুটারিতে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন মহানগর ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম। প্রেমের সূত্র ধরে গত ২৩ অক্টোবর ওই ছাত্রীকে ক্যাদারেরপুল এলাকার সুমাইয়া আক্তার মেঘলা ওরফে আলেয়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন এএসআই রায়হানুল। ২৫ অক্টোবর স্কুলছাত্রীকে আবার ওই বাসায় নিয়ে যান রায়হান। সেখানে মেঘলা ও তাঁর সহযোগী সুরভি আক্তারের সহায়তায় বাবুল হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ নামের দুই ভাড়াটিয়া স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এতে ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ তাকে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তখন মেঘলাকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে আরেক সহযোগী সুরভিকেও আটক করা হয়। আটক মেঘলা ও সুরভি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দেওয়ায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁদের জেলহাজাতে পাঠানো হয়।
এদিকে বুধবার বিকেলে বাবুল ও আজাদ আদালতে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পুলিশ সদস্য রায়হানুল ইসলামসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হারাগাছ থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।
অন্যদিকে অসুস্থ ওই ছাত্রীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করায় পুলিশ। সোমবার মামলাটি হারাগাছ থানা থেকে রংপুরে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এ বি এম জাকির হোসেন বলেন, দুই আসামি আদালতে ঘটনার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
রায়হানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, এজাহারভুক্ত আসামিদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি এবং আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ধর্ষণের ঘটনায় এএসআই রায়হানের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপরদিকে রায়হানকে গ্রেপ্তার ও তার শাস্তির দাবিতে নাগরিক সমাজের ব্যানারে গতকাল মহানগর পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মানবাধিকারকর্মীরা। তার আগে গত মঙ্গলবার একই দাবিতে নগরীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে কয়েকটি বাম সংগঠন।