সাবেক সংসদ সদস্য, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালের নেতৃত্ব ১৫ টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে প্রগতিশীল ইসলামী জোট গঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল, ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর এই জোট ‘প্রগতিশীল ইসলামী জোট’।।
এম এ আউয়াল ২০১৪ সালে তরিকত ফেডারেশন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেন। পরে অবশ্য ২০১৮ সালে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলে তিনি ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি গঠন করেন।
স্বাগত বক্তব্যে এম এ আউয়াল বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি দিনে দিনে উদ্বেগজনক জায়গায় যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের অবারিত মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস জনগণের জীবন। হাসপাতালে হাসপাতালে মৃত্যুর রোনাজারি। প্রশাসনে নানারকম অনিয়ম, দুর্নীতি। স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারের। একইভাবে সংবিধানসম্মত উপায়ে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আমরা অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের সব প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানাই।’
তিনি বলেন, ‘দেশের একটি জরুরি মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে প্রগতিশীল, ইসলামী ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো সম্মিলিতভাবে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত রুখে দিতে প্রস্তুত। বিগত প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা অন্তত ২০টি দলের সঙ্গে আলোচনা, বৈঠক করে অবশেষে ১৫টি দলকে চূড়ান্ত করে একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
লিখিত বক্তব্যে জোটের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতসহ কোনো কোনো দল এই সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশের জনগণ সেই ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। বিশ্বে নির্বাচন বর্জন যেখানে বিরল, সেখানে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিকতাকে ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়ে নির্বাচন বর্জনের বক্তব্য গণতন্ত্রকে বিনষ্ট করারই নামান্তর।’
জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের মানুষ স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করছে, একটি গণবিরোধী শক্তি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বমুখী পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতার ফায়দা লুটতে চায়। ইতিমধ্যে নানা বিদেশি রাষ্ট্র, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনের মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে, যার মধ্য দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নকে নতুন করে আমাদের সামনে হাজির করেছে।’
জোটের অন্তর্ভুক্ত দলগুলো হচ্ছে—ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি, নেজামে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, বাংলাদেশ তরীকত ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগ, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী জনতা দল (বিএনজেপি), ইসলামী লিবারেল পার্টি, জনতার কথা বলে, বাংলাদেশ স্বাধীন পার্টি, বাংলাদেশ গণতন্ত্র মানবিক পার্টি, সাধারণ ঐক্য আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ ও বাংলাদেশ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক ফোরাম।
প্রগতিশীল ইসলামী জোটের ১০ দফা দাবি
১. দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহ আগামী দিনের সকল নির্বাচনে দেশের মালিক জনগণ যেন নির্বিঘেœ নিজেদের পছন্দ মতো সরকার গঠন করতে পারে সেজন্য অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও জনগণের অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং সরকারের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন নির্বাচন কমিশন জরুরি।
২. গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী সকল অপচেষ্টা কঠোর ভাবে দমন করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান করতে হবে। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারীর অবৈধভাবে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে এবং এসব অবৈধ কর্মকান্ডে তাদের সহযোগিতা কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে হবে এবং পাচারকৃত এসব অর্থ দেশে ফেরত আনতে হবে।
৫. অবিলম্বে খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি রোধ করে তা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।
৬. স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক দুর্নীতি ও অব্যবস্থায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় চলমান অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করে আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. স্বাধীন বিচার বিভাগ ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৮. বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ¦ালানি তেলের মূল্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি বন্ধ করে মূল্য মানুষের সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে।
৯. দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সার, বীজসহ যাবতীয় কৃষি উপকরণের মূল্য কমিয়ে কৃষক যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে সে ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে এবং কৃষকের উৎপন্ন খাদ্য সামগ্রীসহ সকল কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য যাতে কৃষক পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রগতিশীল ইসলামী জোটের পাঁচ দফা কর্মসূচি :
১. সংবিধান, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আসন্ন দাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে প্রগতিশীল ইসলামী জোট।
২. প্রগতিশীল ইসলামী জোট সন্ত্রাসী, দুর্নীতি, ব্যাংক লুটেরা ও দেশের অর্থ অবৈধ ভাবে বিদেশে পাচারকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে, এবং এই দাবীর স্বপক্ষে এই জোট বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
৩. খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমিয়ে মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী মুনাফা লোভী অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার নিমিত্তে কর্মসূচি দেবে প্রগতিশীল ইসলামী জোট।
৪. স্বাধীন ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের’ শর্ত সমূহ শিথিল করে এবং নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত আরোপ রহিত করে সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে কর্মসূচি দেবে জোট।
৫. এই জোট রাজনৈতিক হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যাহার করে নির্দোষ সকল দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও আলেম ওলামাগণের কারা মুক্তির জন্য জোর দাবি করছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবিতে কর্মসূচি দেবে প্রগতিশীল ইসলামী জোট।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দাবী বাস্তবায়নে সেপ্টেম্বর ,অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাস ব্যাপি ধারাবাহিক ভাবে কর্মসুচি পালন করা হবে। পরে তারিখ জানানো হবে।