সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিন আহমেদ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারে এলাকাবাসী ও পরিবারের পক্ষ থেকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম আজ বুধবার দুপুরে শেষ হচ্ছে। আল্টিমেটামের সময় শেষ হওয়ার আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এলাকাবাসী ও রায়হানের পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টায় এক সম্মিলিত বৈঠকে নতুন কর্মসূচি দেন তারা।
নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, রায়হানের পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, পরদিন শুক্রবার বাদ জুমা বিভিন্ন মসজিদে রায়হানের জন্য দোয়া মাহফিল এবং শনিবার বিকেল ৪টায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মদিনা মার্কেট পয়েন্টে মানববন্ধন। রায়হানের স্বজন মো: শওকত হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি সফল করতে সিলেটের সর্বস্তরের জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করেন।
মো: শওকত হোসেন বলেন, ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষের পর কঠোর কর্মসূচির কথা ছিল। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আপাতত কর্মসূচি থেকে সরে এসেছি। তবে এরপর যদি প্রশাসন জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয়, তাহলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।
এলাকাবাসীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, এই আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। বিচারপ্রাপ্তির আন্দোলন। সরকারও এই আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
এলাকাবাসী ও রায়হানের পরিবার ছাড়াও গতকাল মঙ্গলবারের সম্মিলিত বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস, সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ দাসসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এদিকে সিলেট বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩৪) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুহিদুল ইসলাম সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো: জিয়াদুর রহমানের আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর কিছু সময় আগে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় সাময়িক বহিষ্কৃত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান উদ্দিন আহমদকে (৩৩) গত ১০ অক্টোবর রাতে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। পরের দিন ১১ অক্টোবর সকালে তাঁর লাশ পায় পরিবার। পরে ওই দিন রাতে নিহত রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। স্বজনদের অভিযোগ, ১০ হাজার টাকা না পেয়ে রায়হানকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর ১২ অক্টোবর ওই ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যাহার করা হয় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে। এসআই আকবর এখন পলাতক রয়েছে।