দেশের মুখ উজ্জ্বল করলেন কিশোয়ার ও সাদিয়া

করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে বাংলাদেশের দুজন নারী দেশের মানুষকে আবেগে ভাসিয়েছেন। তারা হলেন-অস্ট্রেলিয়ার মাস্টারশেফ প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে বাঙালি রান্ধন শিল্পী কিশোয়ার চৌধুরী নুপুর ও ভল্টিক নামে করোনা প্রতিরোধী স্প্রে উদ্ভাবন করে চমক সৃষ্টিকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী সাদিয়া।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি মেয়ে কিশোয়ার চৌধুরী নুপুর। যিনি অস্ট্রেলিয়ার একটি টিভি চ্যানেলে রান্না বিষয়ক প্রতিযোগিতায় বিচারকদের কাছে বাঙালি রান্নার অভূতপূর্ব প্রসংশা পেয়ে চূড়ান্ত পর্বে স্থান করে নেন। যা ইতিমধ্যে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিদেশে বেড়ে ওঠা কিশোয়ারের বাঙালি খাবারের স্বাদের ওপর যে দখল তা রীতিমত বিচারক থেকে শুরু করে বিশ্বের দর্শকদের অভিভূত করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্নের বাসিন্দা কিশোয়ার। জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়াতেই। কিশোয়ার চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়া এবং সমাজসেবার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত মুখ। বাংলাদেশি ব্যবসায়ী কামরুল হোসাইন চৌধুরী ও লায়লা চৌধুরীর মেয়ে। মেলবোর্নের মোনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে কমার্সে স্নাতক করা নারী লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব আর্টস থেকে স্নাতোকোত্তর করা এখন নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

কিশোয়ার বলেন, আমার স্বপ্নটা খুব সাধারণ, বাংলাদেশি খাবার তেমন একটা উপস্থাপিত হয় না। আবার যাও হয়, তাও ভারতীয় খাবারের সঙ্গে মিশে যায়। আমার বাবা-মা প্রায় ৭০ বছর বয়সী। কিন্তু তারা এখনো বাংলাদেশে ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে রাখছেন। রান্না নিয়ে আমার স্বপ্ন হলো- বাংলাদেশি একটি রান্নার বই লিখে যাওয়া। কারণ, আমি যদি এটা আমার সন্তানের জন্য রেখে না যাই, তবে বাবা-মায়ের কাছ থেকে পাওয়া বাংলাদেশের সেই ঐতিহ্য আমার সঙ্গেই শেষ হয়ে যাবে।

এদিকে ভল্টিক নামে করোনা প্রতিরোধী স্প্রে উদ্ভাবন করে চমক সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী সাদিয়া। করোনারোধী স্প্রেকে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটিকে যুগান্তকারী উদ্ভাবন হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ১৪ মাসের গবেষণা শেষে সাদিয়া খানম (২৬) ‘ভল্টিক’ নামের একটি স্প্রে উদ্ভাবন করেন, যা সব ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও অন্যান্য অণুজীব শতভাগ ধ্বংস করতে সক্ষম। একবার স্প্রে করার পর ১৪ দিন পর্যন্ত এর কার্যকারিতা থাকে। ইতোমধ্যেই বিশ্বের ১৩টি দেশ থেকে ভল্টিক নামে এ জীবাণুনাশকটির ১ কোটি অর্ডার পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই স্প্রেটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, বিমান, পরমাণু কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে প্রয়োগ করা যায়। বিভিন্ন স্থাপনায় ভল্টিক স্প্রে করলে করোনা ভাইরাসের জীবাণু শতভাগ নির্মূল হয়। এটি ব্যবহারের ফলে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলো।

নতুন এ উদ্ভাবন প্রসঙ্গে সাদিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক ছিল। তার দাদা আলজেইমারে মারা গেলে রোগ প্রতিরোধ করার ব্যাপারে তার আগ্রহ চরমে পৌঁছায়। এরপরই প্রতিরোধক তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কয়েক মাসের গবেষণা শেষে তিনি ভল্টিক উদ্ভাবনে সক্ষম হন।

ব্ল্যাকবার্ন মাদ্রাসা থেকে সফলভাবে জিসিএসই এবং আলিমা কোর্স পাস করেন। পরবর্তীতে ম্যানচেস্টারের হলি ক্রস সিক্সথ ফর্ম কলেজে পড়াশোনা শেষ করে চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। আলঝাইমা ও নিউরোডিজেনার ওপর পিএইচডি শুরু করেছিলেন সাদিয়া।

সাদিয়ার বাবা কবির আহমেদ একজন হোটেল ব্যবসায়ী। ১৯৬৪ সালে সাদিয়ার দাদা আজমত আলি সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তখন থেকে সেখানে তাদের বসবাস।