দেশে মৌলবাদী অপশক্তির স্থান নেই: তথ্যমন্ত্রী

প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে বসে আছে মন্তব্য করে দেশে এই অপশক্তির কোনো স্থান নেই বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আজকে যারা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিচ্ছে, এই সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তি দেশে ঘাপটি মেরে থাকে, সময়ে সময়ে ফণা তোলার চেষ্টা করে। কোনোভাবেই এদের ফণা তুলতে দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, এই অপশক্তিকে পরাভূত করেই বাংলাদেশ রচিত হয়েছে।’

‘এই মৌলবাদী অপশক্তি, যারা দেশকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চায়, এরা ফণা তোলার চেষ্টা করতে পারত না, যদি না তাদের রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা না হতো’ উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একটি দল, একটি গোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। অথচ সেই দলের প্রতিষ্ঠাতার ভাস্কর্যও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে। কিন্তু এ সত্ত্বেও তারা এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।’

হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে রচিত স্বাধীন বাংলাদেশে মৌলবাদী অপশক্তির কোনো স্থান হবে না, বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। 

এ সময় ভাস্কর্যবিরোধী অপতৎপরতাকারীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মামলা হওয়ার অর্থই আইনের আওতায় আসা। মামলা হয়েছে এবং সেই মামলা করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও নিতে হয়েছে।’

‘বিএনপি চায় না রোহিঙ্গারা ভালো থাকুক’

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরকে বিএনপি আত্মঘাতী বলেছে- এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সমগ্র দেশের মানুষ এবং রোহিঙ্গারা এই স্থানান্তরকে স্বাগত জানিয়েছে। যেসব রোহিঙ্গা সেখানে গেছে তারা অত্যন্ত খুশি হয়ে বলেছে, তারা দেশে ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে চায়। এখন বিএনপির এই বক্তব্যে মনে হয়, রোহিঙ্গারা ভালো থাকুক তা তারা চায় না। কারণ ভাসানচরে যে সুব্যবস্থা আছে এটি ইউরোপে যেখানে শরণার্থীদের রাখা হয় তার চেয়েও অনেক ভালো। বিএনপি আসলে চায়, রোহিঙ্গা ইস্যুটা টিকে থাকুক। আর বিএনপি যে সময়ে সময়ে এই নিয়ে কথা বলে, বিএনপির আমলে যে রোহিঙ্গারা এসেছিল তারা এখনো বাংলাদেশে আছে। তাদের সেই দিকে একটু দৃষ্টিপাত করার আহ্বান জানাই।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সাম্প্রতিক মন্তব্য ‘দেশে গণতন্ত্র নেই’ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের জন্মটাই অগণতান্ত্রিকভাবে সেনা ছাউনিতে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে, তারা যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, তখন দেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ হাসে। আর দেশে অবাধ গণতান্ত্রিক চর্চা, পরিপূর্ণ বাকস্বাধীনতা আছে বলেই মির্জা ফখরুল সাহেবসহ বিএনপিনেতারা প্রতিদিন এই ধরনের বিষোদগার করতে পারেন।’

এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে পরিবেশ গবেষক তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। সেইসঙ্গে আরো অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যেগুলো পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছে।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি কাজ অব্যাহত রাখতে ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের প্রতি আহ্বান জানান। 

বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠের কাওসার রহমানের নেতৃত্বে দৈনিক বর্তমানের মোতাহার হোসেন, ইত্তেফাকের মুন্না রায়হান, জাগো নিউজের ইসমাঈল হোসাইন, খোলা কাগজের শাহাদাত স্বপন, বাংলা নিউজের গৌতম চন্দ্র ঘোষ, এবিনিউজ২৪.কমের তরিকুল ইসলাম সুমন, চ্যানেল আইয়ের মোরছালীন বাবলা, আমাদের সময়ের ইউসুফ আরেফিন, যমুনা টিভির আলমগীর স্বপন বৈঠকে অংশ নেন।