ধর্ষকদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতের দাবি ছাত্রলীগের

সারাদেশে সংঘটিত ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে আলোক প্রজ্জ্বলন করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। 

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদ দেশে মোমবাতি জালিয়ে এই কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র সংগঠনটি। আলোক-প্রজ্জ্বালন শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি ধর্ষণবিরোধী মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।

কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ সংগঠনটির শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। 

আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমরা চাই, ধর্ষককে দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। আমরা জানি, ধর্ষণের বিচারের ক্ষেত্রে কিছুটা আইনি জটিলতা আছে, আইনি দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক সময় অপরাধী পার পেয়ে যায়। কিন্তু আমরা বার বারই ছাত্রলীগ দাবি জানিয়েছি, যারা ধর্ষক বা ধর্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের যেন দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হয়।এর ফলে যারা এই ধরনের মন-মানসিকতা লালন করে, তারা ভয় পাবে। একইসাথে ধর্ষককে যাতে সমাজের নিকৃষ্ট প্রাণি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পারিবারিকভাবে হোক বা সামাজিকভাবে হোক আমরা যদি তাদের বয়কট করতে পারি, তাহলে সমাজে ধর্ষণের ঘটনা কমে আসবে।

প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে ধর্ষকের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়ে জয় বলেন, বর্তমান যে আইন আছে, তা যদি সংশোধনের দরকার হয় বা শাস্তি বাড়ানোর দরকার হয়, তাহলে তা করেই অপরাধীকে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি, আমাদের শিক্ষার্থী বোনরা বা মা-বোনেরা যদি কোনোভাবে রাস্তায় নিপীড়ন বা ইভটিজিংয়ের শিকার হয় তাহলে তারা যেন আমাদের জানায়। আমরা সেই ধর্ষক রা ইভটিজারদের ধরে আমারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেব।

সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্ব করি। ছাত্রলীগ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন। ছাত্রলীগকে ব্যব্হার করে কেউ অপকর্ম করে পার পাবে না। সংগঠনের বাইরে গিয়ে যারা ব্যক্তিগতভাবে সংগঠনবিরোধী কাজ করে, তাদেরকে আমাদের সংগঠনের হিসেবে প্রচার করা, এটা সংগঠনের উপরে একটা দায় বর্তানোর মনোভাব বলে আমি মনে করি। এই ব্যাপারটাকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ রাজনীতিকে ঘোলা করার পাঁয়তারা করে থাকে। আমরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি, বাংলাদেশের সব জায়গায় সোচ্চার থাকতে যাতে তাদের উপস্থিতিতে কোথাও ধর্ষণের ঘটনা না ঘটতে পারে।

তিনি বলেন, কারও উপর দায় বা ধর্ষণে যখন রাজনৈতিক প্রলেপ দেওয়া হয় তখন কিন্তু ধর্ষকের কাছ থেকে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদিকে চলে যায়। সেজন্য সেই ধর্ষকের বিচার হয় না। কিছু দিন পর মানুষ তা ভুলে যায়। সুতরাং ধর্ষণকে প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের নৈতিক পরিবর্তন আনতে হবে। মানুষকে সামাজিকভাবে সচেতন করতে হবে। যারা লাঞ্ছিত হচ্ছেন তাদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে এবং খুবই দ্রুত সময়ে অপরাধীদের ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।

এদিকে দেশব্যাপী ধর্ষণ-নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং জড়িতদের বিচার দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) নগর ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর সঞ্চালনায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বক্তারা বলেন, ধর্ষকদের পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক মোড়কদানকারীরা মূলত ধর্ষকের শাস্তি বাস্তবায়নের পথে বড় অন্তরায়। ধর্ষণকাণ্ডে রাজনৈতিক রুপদানকারীদের একই অপরাধে অভিযুক্ত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তারা।

এবং ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত বিচারের জন্য বিশেষায়িত আদালত (ট্রাইব্যুনাল) এবং ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) বিধান চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ ফুয়াদ হোসেন। নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া না হলে আইনগত প্রতীকার চেয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে নোটিশে।