পায়েল হত্যার দায়ে হানিফ বাসের তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় হানিফ এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসচালক ও দুই সহকারীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো: কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর নিহত পায়েলের পরিবারের সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ঘটনার প্রায় দুই বছর পর গত ৪ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শেষে আজ রায় ঘোষণা করেন বিচারক। এ সময় তিন আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন হানিফ পরিবহনের বাসচালক জামাল হোসেন, সুপারভাইজার জনি ও সহকারী ফয়সাল হোসেন।

নিহত পায়েল চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরের বাসিন্দা গোলাম মাওলার ছেলে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিন শান্তর সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন সাইদুর রহমান পায়েল। কিন্তু ২৩ জুলাই মুন্সীগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ।

পায়েলের লাশ উদ্ধারের পরদিন ২৪ জুলাই তাঁর মামা গোলাম সরওয়ার্দী বিপ্লব বাদী হয়ে হানিফ পরিবহনের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আসামি করে গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। এর পরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তাঁর সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে জামাল হোসেন ও ফয়সাল হোসেন দুই ভাই। পায়েলকে খুন করার আদ্যোপান্ত জানিয়ে তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।

গত ৪ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শেষে আজ রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন বিচারক। সেদিন মামলার তিন আসামির জামিন বাতিল করে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠান।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান খালিদ আদনান বলেন, যুক্তিতর্কে উভয় পক্ষের আইনজীবী অংশ নিয়েছিলেন। করোনার অজুহাত দিয়ে তাঁরা বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আদালত তাঁদের কোনো সুযোগ দেননি।

মামলার বাদী গোলাম সরওয়ার্দী বলেন, ২০১৮ সালের ২১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে হানিফ পরিবহনের ভলভো বাসে করে ঢাকায় রওনা করেন পায়েল। পরদিন ২২ জুলাই ভোরে তিনি রাস্তায় বাস থেকে প্রস্রাব করতে নামেন। বাসে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহত হন পায়েল। ‘দায় এড়াতে’ চালক, সহকারী ও সুপারভাইজার মিলে আহত পায়েলের মুখ থেঁতলে দিয়ে নদীতে ফেলে দেন বলে অভিযোগ করা হয়। পায়েল হত্যা মামলায় গজারিয়া থানা পুলিশ বাসের সুপারভাইজার জনি, চালক জামাল হোসেন ও তাঁর সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আসামি করে গত বছরের ৩ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। পরে পায়েলের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ মামলাটি চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর মামলার বিচারকাজ শুরু হয় চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ বদলি হয়ে আসে। এর পর মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।