ভারতের নিষেধাজ্ঞা আমাদের চুক্তিতে প্রভাব ফেলবে না : সচিব

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ আব্দুল মান্নান বলেছেন, ভারত সরকার তাদের দেশে উৎপাদিত সিরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন রপ্তানি ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা আমাদের চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সচিব এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ভ্যাকসিনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘আমি এখনই ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনরাকে ফোন করলাম। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, আমরা যে চুক্তি করেছি, এটার ফিন্যান্সিয়াল কতগুলো ট্রান্সজেকশন রয়েছে। কীভাবে টাকাটা যাবে, কীভাবে ব্যাংক গ্যারান্টি দিব, এসব বিষয় নিয়ে সরকার টু সরকার চুক্তি হয়েছে। যে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার কথা ভারত সরকার বলেছে শুধু কর্মাশিয়াল অ্যাকটিভিটিজের ওপর। আমাদের গুলোর ওপর না। কারণ আমাদেরটা সরকার টু সরকার। কাজেই ভারত সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আমাদের চুক্তির বিষয়ে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না।’

চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো আমরা টিকা পাচ্ছি কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ভারত নিষেধাজ্ঞা শুধু বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রেই করেনি, অন্যান্য দেশের জন্যও করেছে। কাজেই ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হলে তখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা রপ্তানিতে কয়েক মাসের জন্য ভারতের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘ভারতের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা শুনেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করছি। আশা করছি, সিরামের সঙ্গে চুক্তি ব্যাহত হবে না। চুক্তি অনুযায়ী আশা করছি টিকা পাব।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ চুক্তি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। আশা করছি, ভারত চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে।’

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরো বলেন, ‘ভারতকে টিকা দেওয়া বাবদ টাকা পাঠানোর সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। আগামীকাল চুক্তি অনুযায়ী অর্ধেক টাকা, অর্থাৎ ১২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এ সমস্যা নতুন করে তৈরি হয়েছে। গতকালও আমরা নিশ্চিত ছিলাম টিকা পাব। আজ শুনলাম, ভারত সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর। কাজেই আমরা ভারতের ওপর বিশ্বাস রাখতে চাই।’

জাহিদ মালেক আরো বলেন, ‘অন্যান্য দেশের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে।’ এজন্য টিকা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে জানান তিনি।

এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জানুয়ারির মধ্যে আমরা সিরামের টিকা পাব।’ কবে পাব এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। নিশ্চিত হলে বলতে পারব।’

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধানের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা কয়েক মাসের জন্য রপ্তানির অনুমতি দেবে না ভারত সরকার। একাধিক উন্নয়নশীল দেশের জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ১০০ কোটি ডোজ উৎপাদনের চুক্তি করেছে সিরাম ইনস্টিটিউট। চলতি বছর যত করোনার টিকা উৎপাদন করা হবে, তার সিংহভাগই যাবে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর কাছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত টিকাগুলোর বেশির ভাগই উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলে বিশ্বের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা হাতে পেতে খুব সম্ভবত কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।

এপির সঙ্গে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদার পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, ভারতের টিকা অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ গতকাল রোববার শর্ত সাপেক্ষে অক্সফোর্ডের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। শর্তে বলা হয়েছে, ভারতের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা বা টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আপাতত টিকা রপ্তানি করতে পারবে না সিরাম ইনস্টিটিউট।