রাজস্ব বোর্ডকে দুই ভাগ করতে চায় পরিকল্পনা কমিশন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ভেঙে দু’ভাগ করার প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশন। বিভাগ দুটিতে থাকবেন আলাদা চেয়ারম্যান। পরিকল্পনা কমিশনের এমন প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আহরণে গতি আসবে বলে মনে করছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যানরা। আর বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। 

দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। বাড়ছে বাজেটের আকার। আর বড় ব্যয়-চাহিদার বেশিরভাগ অর্থের জোগান আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকার।

এ লক্ষ্য পূরণে এনবিআরে বড় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখছে পরিকল্পনা কমিশন। তাই বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে আলাদা দুটি বিভাগ করার পরামর্শ সংস্থাটির।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড: শামসুল আলম বলেন, এরকম একটা প্রস্তাব রয়েছে। তবে এর জন্য সময় লাগবে। এডজাস্টমেন্টের ব্যাপার আছে।

এদিকে, পরিকল্পনা কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়বে। সহজ হবে নীতি প্রণয়ন কার্যক্রমও। এমনটাই বলছেন, সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যানরা।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড: মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, একই লোক প্রত্যক্ষ কর দেখছে আবার পরোক্ষ করও দেখছে। একই লোক নীতিও তৈরি করছে আর বাস্তবায়ন করছে। এখানেই একটা বিভাজন প্রয়োজন।

আর ব্যবসায়ী নেতারাও বলছেন, রাজস্ব বিভাগে বড় ধরনের সংস্কার এখন সময়ের দাবি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, আমাদের দেশের ট্যাক্স-জিডিটিপি যেখানে  বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন, সেখানে যদি এই পরিবর্তনটা আনতে পারি এটা একটা বড় পরিবর্তন হবে। এটা বড় রিফর্ম হবে এবং আমার বিশ্বাস এটা অনেক বেশি এ্যাফেক্টেট হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দুই ভাগ করার উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন বেশ চ্যালেঞ্জিং বলে মত অর্থনীতিবিদদের।

সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার দিক থেকে নীতি প্রণয়নকারী সংস্থা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার মধ্যে যদি পার্থক্য থাকে, আর সেটাই বাঞ্ছনীয়। কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে নীতি প্রণয়ন করেন তারা যদি বাস্তবায়নকারী সংস্থার একটা অংশ হয়ে থাকে তাহলে তাদের যে অগ্রাধিকার, সে অগ্রাধিকারগুলো অনেক সময় অর্থনীতির জন্য কাম্য নাও হতে পারে।

পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড: আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটা এনবিআরের করা উচিত। তবে এটা দিয়ে যদি শুরু হয় তাহলে হয়তো অন্য রিফর্মগুলো ওদের মাধ্যমে করা যেতে পারে। বর্তমানে এনবিআরে যে প্রশাসন আছে, তাদের যে কাঠামোগত অবস্থা আছে এখান থেকে তারা সরে আসতে চাইবে না। কাজেই তাদেরকে সরে আসতে বাধ্য করার জন্য আমি মনে করি যে নীতি ও সংস্কার এই বিভাগকে আলাদা করতে হবে। তবে  তাদের মাধ্যমে এই কাজটা হয়তো করিয়ে নেয়া যেতে পারে।

তবে চ্যালেঞ্জিং হলেও সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এ ধরনের বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।