সময়ের আগেই কোভ্যাক্সিন টিকা অনুমোদন, সমালোচনার ঝড় ভারতে

ভারতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করোনার প্রতিষেধক টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’-এর ট্রায়াল চলা অবস্থায় কেন জরুরিভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া হল, এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে ভারতে। বিশেষ করে সে দেশের স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোই বিস্মিত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। রোববার (৩ জানুয়ারি) কোভ্যাক্সিন টিকার অনুমোদন মিললেও, তার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল এখনো শেষ হয়নি। ভ্যাকসিনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকারের এই তড়িঘড়ি অনুমোদনকে অনেকটা উদাসীন আর দায়িত্বহীন আচরণ বলছে বিশেষজ্ঞ ও বিরোধীদল।

ভারতের হায়দরাবাদ শহরে ভারত বায়োটেক ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ- আইসিএমআর-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে করোনা প্রতিষেধক ‘কোভ্যাক্সিন’। নিজস্ব প্রযুক্তিতে দেশীয় বিজ্ঞানীরা এই ভ্যাকসিন তৈরি করছেন। মোট ২৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপরে তৃতীয় পর্যায়ের ‘এফিকেসি ট্রায়াল’ চলার কথা, কিন্তু গত সপ্তাহ পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক নথিভুক্ত হয়েছেন ১৩ হাজারের মতো।

ট্রায়াল শেষ হওয়ার টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দেয়ায় হতবাক হয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক পর্যবেক্ষক অল ইন্ডিয়া ড্রাগ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক। সংস্থাটির মতে, কোভ্যাক্সিন-এর কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট তথ্য ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এটি যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। আর যখনই স্বচ্ছতার প্রমাণ দেখাতে পারবে না, এ বিষয়ে সামনে আরো প্রশ্ন আসবে।’

ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা সোমানি কোভ্যাক্সিন শতাভাগ নিরাপদ এবং ইউমিউনিটি বাড়তে সহায়তা করবে বলে প্রকাশ্যে প্রচারণায় মেতেছেন। তিনি আরো যোগ করেন, এই ভ্যাকসিন শতভাগ নিরাপদ। 

‘ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন সম্ভবত বিশ্বের সেরা ভ্যাকসিন হতে পারে। তবে এটিই আসল কথা না। কিন্তু এতে হালকা জ্বর, অ্যালার্জিসহ ব্যাপক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার শঙ্কা আছে। উদ্বেগটি হলো, এখন পর্যন্ত এই টিকার কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল অসম্পূর্ণ রেখেই জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। কোভ্যাক্সিন ১১০ ভাগ নিরাপদ, এমন তথ্য পরিসংখ্যানের উপর যাচাই করে জানায়নি মোদি সরকার। অযৌক্তিক ব্যাখা দাঁড় করিয়ে ভ্যাকসিন অনুমোদনের কোন মানে হয় না।’ ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এমনটাই বলছিলেন ভারতের প্রখ্যাত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একজন ডা. গগনদীপ কং।

পূর্বে কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি বলে গভীর উদ্বেগ জানান এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। গণমাধ্যমে তিনি আরো বলেন, কোভ্যাক্সিন-এর কার্যকারিতা নিয়ে তথ্য নেই, এ বিষয়টি কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। একেবারে নেই।

সময়ের আগেই কোভ্যাক্সিন-এর অনুমোদনে শুধু বিশেষজ্ঞরাই চিন্তিত নয়, নিজ দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে ভাগে অনুমোদন শেষ পর্যন্ত কতটা নিরাপদ বা কার্যকর তা নির্বিশেষেই উদ্বেগের বিষয়।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, তড়িঘড়ি করে কোভ্যাক্সিন ছাড়পত্রে অনেক বিজ্ঞানী ও ভারতের বিরোধী দল নানা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে বিজেপি সরকারকে। টুইটারে বিরোধীদল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর, জয়রাম রামেশ, সাবেক উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এতসব প্রশ্ন আর আলোচনা-সামলোচনায় কোন কর্ণপাত না করে সরকারের সাফ কথা, নিজ দেশে উদ্ভাবিত ‘কোভ্যাক্সিন’ শতাভাগ নিরাপদ এবং কার্যকর।

তবে নানা মহলের আশঙ্কা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না কোভ্যাক্সিন উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। জানিয়েছে, এর স্বচ্ছতা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ভারত বায়োটেক ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ- আইসিএমআর-এর দাবি, প্রথম-দ্বিতীয় ট্রায়ালে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বিষয়ে সরকার কোন ধরনের পরিসংখ্যান বা ব্যাখা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ব্যাপক আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। 

অন্যদিকে, ভারতের পুনে শহরের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভাইরাসের ‘কোভিশিল্ড’ টিকা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের অনুমোদন মিলেছে। কোভ্যাক্সিন এবং কোভিডশিল্ড টিকাদান কর্মসূচি দ্রুতই শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী নয়াদিল্লি।