রাজধানীর কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার মামলায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো: সাইফুল ইসলাম ও সংগঠনটির ঢাবি শাখার সহসভাপতি মো: নাজমুল হুদাকে দুদিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া এই আদেশ দেন।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) স্বপন মণ্ডল বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার দুই আসামিকে হাজির করে কোতায়ালী থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোসহ সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক গ্রেপ্তারের আবেদন মঞ্জুর করে দুদিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল রোববার রাতে রাজধানী থেকে এই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে আজ ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ বলেন, গতকাল রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে করা মামলার চার নম্বর আসামি মো: সাইফুল ইসলাম ও পাঁচ নম্বর আসামি মো: নাজমুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, সাইফুল ও নাজমুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জেনেছি। কিন্তু এখনো আমাদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মো: সোহরাব হোসেনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ থানায় ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে নুরুল হক নুরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরের দিন ২১ সেপ্টেম্বর পরস্পর যোগসাজশে অপহরণ করে ধর্ষণ, ধর্ষণে সহায়তা এবং হেয়প্রতিপন্ন করে ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার করার অভিযোগ একই ব্যক্তিদের আসামি করে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় আরেকটি মামলা করেন ওই ছাত্রী।
মামলার বাদী ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ওই ছাত্রী বলেন, দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুনলাম। আমি চাই মামলার বাকি চারজন আসামিকেও যেন গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
এদিকে ২৩ সেপ্টেম্বর ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সংগঠনের ঢাবি শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল সংগঠনটি। গতকাল রোববার তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় পরিষদের কাছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, অভিযোগকারী মামলার এজাহারে হাসান আল মামুনের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করলেও হাসান আল মামুন সেটি অস্বীকার করেছেন। একই বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবেই তাঁদের পরিচয় হয়, সাংগঠনিক কাজের সূত্রে নয়। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কের মতো কোনো ঘটনা ঘটছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি। এমনকি অভিযোগকারীও এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে কোনো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি।
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর ওই ছাত্রী প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের তদন্ত কমিটির সদস্য রাফিয়া সুলতানা আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাঁর কাছে আমি ধর্ষণের ঘটনার কী প্রমাণ দেব? এটা তো মেডিকেল রিপোর্টের ব্যাপার, যা আমি থানায় দিয়েছি। আর তা ছাড়া শুরুতেই তো ছাত্র অধিকার পরিষদ ধর্ষণকারীদের পক্ষে একটি অবস্থান নিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে তাঁরা কী প্রতিবেদন দেবে? যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কি সুষ্ঠু তদন্ত করার ক্ষমতা রাখে? সুষ্ঠু প্রতিবেদনের কথা বাদই দিলাম, তাদের তো তদন্ত করার অধি
কারও নেই। আমি এই প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করছি।
মামলার এজাহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, আসামি হাসান আল মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র। তিনি আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সুবাদে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই মামুনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয় এবং পরে তা প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। এর ধারাবাহিকতায় আসামির সঙ্গে আমার বিভিন্ন সময়ে মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন হয়। সেখানে আসামি আমাকে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আসামি এ বছরের ৩ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে তার বাসা নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ এলাকায় যেতে বলে এবং আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার বাসায় ধর্ষণ করে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ঘটনার পর গত ৪ জানুয়ারি আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। ১২ জানুয়ারি আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মামুনের বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে মামুন ও সোহাগ বাধা দেয়। এর আগে মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে রাজি হয়, কিন্তু আমি অসুস্থ হওয়ার পর সে নানা টালবাহানা শুরু করে।
উপায়ান্তর না দেখে গত ২০ জুন বিষয়টি ভিপি নুরকে মৌখিকভাবে জানাই উল্লেখ করে এজাহারে আরো বলা হয়, নুর বলেন, মামুন আমার সহযোদ্ধা। তাঁর সঙ্গে বসে একটা সুব্যবস্থা করে দেব। এরপর ২৪ জুন মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমার সঙ্গে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু মীমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি যদি বাড়াবাড়ি করি, তাহলে তাঁর ভক্তদের দিয়ে ফেসবুকে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে পতিতা বলে প্রচার করবে বলে হুমকি দেয়। তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১১ লাখ সদস্যের গ্রুপে এ প্রচারণার হুমকি দেওয়া হয়। নুর আরো বলেন, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতোমধ্যে মামলার চার নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে এবং ৫ ও ৬ নম্বর আসামিকে লাগিয়ে দেয় কুৎসা রটাতে। তারা মেসেঞ্জার চ্যাট গ্রুপে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করাসহ সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত করে।
এজাহারে বাদী আরো বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও আসামিরা তাদের ষড়যন্ত্রকারী বলে আখ্যা দেয়। এরপর আমি শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বলার কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।