জীবিকা যখন ‘হিমবাহ শিকার’

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রকোপে হিমবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন বরফের খণ্ড ভেসে বেড়ায় গ্রিনল্যান্ডের সমুদ্রে। মোটরচালিত নৌকায় চেপে ভাসমান বরফ বা হিমবাহ শিকার করে গ্রিনল্যান্ডের কিছু ব্যক্তি। গ্রিনল্যান্ডে গেলে এমনই অদ্ভুত এক পেশার সন্ধান মিলবে। ওই বরফ শিকারের জন্যই স্থানীয় হিমবাহ শিকারিরা পাড়ি দেন প্রায় তিরিশ মাইল পথ।

গ্রিনল্যান্ডে জমে থাকা প্রকাণ্ড হিমবাহগুলির আনুমানিক বয়স কমপক্ষে ১০ হাজার বছর। ফলত, এই হিমবাহের মধ্যেই পরিবেশের বিশুদ্ধতম জল সঞ্চিত রয়েছে বলেই মনে করেন গবেষকরা। পাশাপাশি গুণগত মানের কারণেও এই বরফের চাহিদাও আকাশছোঁয়া বাজারে। মূলত ওয়াইন থেকে শুরু করে প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এই বরফগলা জল। পানীয় জল হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। গ্রিনল্যান্ডের স্থানীয় দোকানগুলিতে একটি বোতলের দাম ধার্য হয় প্রায় ১০ ডলার।

তবে এই বরফ সংগ্রহের প্রক্রিয়াও খুব একটা সহজ নয়। সমুদ্রে ভাসমান থাকায়, বরফখণ্ডের উপরিতল লবণের সংস্পর্শে আসে। তাই ডিঙিতে তোলার পর অত্যন্ত সতর্কভাবেই ব্রাশ করা হয় গোটা বরফখণ্ডটিকে। তারপর হাতুড়ি দিয়ে ছোটো ছোটো টুকরে ভেঙে সংরক্ষিত করা হয় ব্যারেলে। পরিসংখ্যান বলছে, গ্রীষ্মকালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে প্রায় ৮ লক্ষ লিটার বরফ সংগৃহীত হয় গ্রিনল্যান্ড থেকে। বর্তমানে শুধু গ্রিনল্যান্ডই নয়, হিমবাহ-গলা জল সরবরাহিত হয় থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্যের মতো দেশেও।

এই বরফ শিকারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না পরিবেশ তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে পরিবেশকর্মীদের মধ্যেও। তাঁদের একটা বড়ো অংশই সমর্থন করেন না এই পেশাকে। শিকারিরা অখণ্ড হিমবাহকে আঘাত করেন না কখনোই। বরং উষ্ণায়নের প্রভাবে হিমবাহ থেকে খসে পড়া খণ্ডগুলিই তাদের শিকারের লক্ষ্য। আর ভাসতে ভাসতে সেইসব খণ্ড আর্কটিক অঞ্চলের বাইরে চলে এলে তাদের স্থায়িত্ব থাকে মাত্র কয়েক ঘণ্টা।