বিকাশমান অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন মাতলুব আহমাদ

কিছু মানুষ কেবল স্বপ্ন দ্যাখেন, কিছু কিছু মানুষ স্বপ্ন দ্যাখান আর কিছু মানুষ দেখা স্বপকে বাস্তবে রূপ দেন। এমনি একজন স্বপ্নবানের আবদুল মাতলুব আহমাদ। যার হাত ধরেই হাটি হাটি পা পা করে গড়ে উঠা নিটল-নিলয় গ্রুপ নামের গাছটা আজ বিশাল এক মহীরূহ। স্বাধীনতার পর উদ্যোক্তা উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের পথচলায় আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন, সফল হয়ে পথ দেখিয়েছেন এবং বিকাশমান অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

বর্তমানে তিনি ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ছিলেন।বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রী (এফবিসিসিআই)এর সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেছেন বরেণ্য এ ব্যবসায়ী।

আবদুল মাতলুব আহমাদ ট্রেডিং ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন এক সুবিশাল শিল্প সাম্রাজ্যের অধিপতি। বার্ষিক কয়েক হাজার কোটি টাকার টার্নওভার, ১৭ হাজার লোকের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে তার শিল্প বাণিজ্যে। কিশোরগঞ্জে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল “ কিশোরগঞ্জ” ইকোনমিক জোন (কেইজেড)” প্রতিষ্ঠার অনুমতি পেয়েছে নিটল-নিলয় গ্রুপ। দেশে গাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে নিটল-নিলয় গ্রুপ। ভারতের বিখ্যাত মোটর গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাটা মোটরসের সঙ্গে যৌথভাবে কারখানা স্থাপন করবে তারা। এ জন্য যৌথ মালিকানায় নিটা নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছে। এ কোম্পানি কিশোরগঞ্জে ইতিমধ্যে মিনি ট্রাক তৈরির কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। নিটল-নিলয় গ্রুপের উদ্যোগে ৯১ একর জমিতে স্থাপিত কিশোরগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এ কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।

শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় আব্দুল মাতলুব আহমাদ মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে এক জমকালো অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক গভর্নর বিচারপতি শ্যামল সেন তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। মাদার তেরেসার সম্মানে ২০০১ সাল থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। আব্দুল মাতলুব আহমাদ ১৭তম ব্যাক্তি হিসেবে এ পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদানের জন্য সিআইপি কার্ড পেয়েছেন আবদুল মাতলুব আহমাদ।

মাতলুব আহমাদ হাসিখুশি ও ধৈর্যশীল মানুষ। বিপদে অস্থির হন না। চারপাশের মানুষ তাকে চেনেন ‘প্রবলেম সলভার’ হিসেবে। শান্ত হয়ে, শান্তির পথে, আনন্দ নিয়ে পথ চলতেই তার স্বাচ্ছন্দ্য। স্বপ্ন দেখেন এক সুন্দর বাংলাদেশের। দেশকে শিল্পায়িত করা আবদুল মাতলুব আহমাদ এর ভিশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে অচিরেই আমরা সমৃদ্ধশালী দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন আব্দুল মাতলুব আহমাদ।

আবদুল মাতলুব আহমাদ ১৫ মার্চ ১৯৫২ সালে ঢাকার ফকিরাপুলে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মাতলুব আহমাদ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আবু আহমাদ আব্দুল্লাহ পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। মা বেগম জাহানারা আব্দুল্লাহ ছিলেন গৃহিণী। বেগম জাহানারা আব্দুল্লাহ পাবনার দুলাইয়ের সর্বশেষ জমিদার হোসেন জান চৌধুরীর কন্যা। মাতলুব আহমাদের স্ত্রী নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সেলিমা আহমাদ এমপি। তাদের দুই সন্তান আব্দুল মুসাব্বির আহমাদ (নিটল) এবং আবদুল মারিব আহমাদ (নিলয়)।

১৯৬৯ সালে পুরাতন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭১ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েশন এবং সম্মানোত্তর ডিগ্রি শেষ করে ১৯৭৬ সালে দেশে ফেরেন। ১৯৮১ সালে একটি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিটল মটরসের যাত্রা । ইংল্যান্ড ও জাপান থেকে যানবাহন আমদানির মাধ্যমে মাতলুব আহমাদ এর বাণিজ্যিক উদ্যোগের সূচনা হয়। ১৯৮৩ সালে এ ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘নিটল মটরস (প্রাইভেট) লিমিটেড। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালে তার প্রতিষ্ঠান ভারতের শীর্ষস্থানীয় যানবাহন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং এর বাংলাদেশের ডিস্টিবিউটরশিপ লাভ করে। এক পর্যায়ে মাতলুব আহমাদ দুই ছেলের নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরন করেন নিটল-নিলয় গ্রুপ।

গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হতে হলে ছোট ব্যবসা দিয়েই শুরু করা ভালো। ‘তরুণদের প্রতি আমার পরামর্শ প্রথমে ছোট ব্যবসা দিয়েই শুরু কর। যে ব্যবসায় হাত দেবে সেটি সম্পর্কে স্টাডি কর। ওই ব্যবসায় লাভের সম্ভাবনা কেমন তা জানার চেষ্টা কর। প্রথমেই লস প্রজেক্টে হাত দিলে অঙ্কুরেই বিনাশ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। মনে রাখবে ব্যবসায় কাউকে কখনও ঠকাবে না। জীবনে সময়কে মূল্য দেবে। তবেই সফলতা ধরা দেবে’- বলেন আবদুল মাতলুব আহমাদ।

ধনী পরিবার থেকে উদ্যোক্তা হলে কিছু আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি কোনো ঝুঁকিতে পড়লে তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ থাকে। কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে এ সুযোগ পাওয়া যথেষ্ট কঠিন। প্রতিটি পদক্ষেপেই তাকে একেকটি বাধা মোকাবিলা করতে হয়। যা শুরু হয় অর্থনৈতিক দৈন্যতা থেকেই। নিজের পরিবারের সমর্থন কিংবা পরিচিতদের মধ্যে যদি বড় কেউ না থাকে এবং পুঁজির যদি স্বল্পতা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে সাহস নিয়েই এগোতে হবে। আপনার লক্ষ্য স্থির থাকতে হবে, আপনি কী অর্জন করতে চান এবং কোন পথে তা অর্জন করবেন। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানও অর্জন করতে হবে। উদ্যোক্তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হচ্ছে ধৈর্য। ব্যবসার শুরুতে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি আসে। কিন্তু আপনাকে অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে সে সময়টুকু অতিবাহিত করতে হবে। আপনাকে সীমিত অর্থের যথাযথ ও প্রত্যাশিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

তারাই উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হন যারা সততা, আমানতদারি বজায় রাখেন। আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, সততা, নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা- এসব বিষয়ে আমি শুরু থেকেই খুবই সিনসিয়ার। আমি কাউকে কোনোদিন ঠকাইনি। কেউ আমার কাছে ১০টি টাকাও পাবে না। যদি তোমার মধ্যে সততা এবং পরিশ্রম থাকে তবে একদিন না একদিন তুমি সফল হবেই।

যেকোন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে অনুপ্রাণিত করার জন্য বিশ্বখ্যাত ব্যবসায়ী আবদুল মাতলুব আহমেদের কিছু কথাই যথেষ্ট। যারা সামান্য পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করেন ঠিকই কিন্তু সফলতার দেখা পাননা। তাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠতে পারেন নিটল-নিলয়গ্রুপের চেয়ারম্যান। সততা, সময় এবং শ্রম যেকোন মানুষকে শিকড় থেকে শিখরে উন্নীত করতে পারে তার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন ব্যবসায়ীদের শিরোমনিদের অন্যতম আবদুল মাতলুব আহমেদ।