হঠাৎ রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও এর দ্রুততম সময়ে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় শুল্কছাড়ে আমদানিকৃত গাড়ি কাস্টম থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারেননি বেশ কয়েকজন সাবেক এমপি। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুল্ক পরিশোধ করে বিলাসবহুল গাড়িগুলো অর্ডারকারীদের মালিকানায় নেওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় নিলামে উঠতে যাচ্ছে সাবেক সংসদ সদস্যদের ৫২টি গাড়ি। তালিকায় আছে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, জাগোয়ার, টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভার, মিতসুবিশি, ফোর্ড, লেক্সাসের মতো নামীদামী সব ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি। গত ১৫ বছরে ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা মূল্যের দামি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় এনেছেন এমপিরা।
কাস্টমস সূত্র বলছে, শুল্কছাড়ে অর্ডার করলেও সাবেক এমপিদের এসব গাড়ি নিতে হলে এখন ৮৫০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে। সেইসঙ্গে পূরণ করতে হবে কাস্টমসের শর্তাবলি। তবে সাবেক এমপিদের অনেকেই পলাতক থাকায় গাড়িগুলো তাদের নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই গাড়ি বন্দরে আসার ৩০ দিন অতিবাহিত হতেই সেগুলো নিলামে তুলছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ মাসের মধ্যেই নিলামের তারিখ চূড়ান্ত হবে।
এরই মধ্যে দুই দফায় ২৪ জন এমপিকে শর্ত মেনে গাড়ি খালাস করতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি কেবলই নিয়ম রক্ষার নোটিশ। মূলত, নিলামেই উঠবে সব গাড়ি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম জানান, শুল্কসহ বিলাসবহুল গাড়িগুলোর প্রতিটির বাজারমূল্য ৮ থেকে ১২ কোটি টাকা। গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার সিসি। স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের গাড়ির ওপর ৮৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এমপিরা এসব গাড়ি পেতেন শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা। এখন সংসদ না থাকায় তারা শুল্কমুক্ত সুবিধা আর পাবেন না।
তাহলে নোটিশ পাঠানো হলো কেন– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্দরে গাড়ি আমদানির পর ৩০ দিন পার হয়ে গেলে চট্টগ্রাম বন্দর নিলামের জন্য কাগজপত্র আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। ওই কাগজপত্রে ছাড় না করা গাড়িগুলোর বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। এরপর আমরা আমদানিকারক বরাবর একটি নোটিশ ইস্যু করি। নোটিশে বলা থাকে নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে গাড়ি ছাড় করার জন্য। ইতোমধ্যে এমপি বা তাদের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে নোটিশ পৌঁছানো হয়েছে। তবে এখানে অনেক শর্ত যুক্ত আছে। যেগুলো আসলে পূরণ করতে পারবেন না সাবেক এমপিরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, নিলাম কার্যক্রম তদারকি করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বন্দর থেকে নিলামযোগ্য পণ্যের তালিকা তাদের দেওয়া হয়। আপাতত, ৫২টি গাড়ির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে যেগুলো ৩০ দিন আগে আমদানি হয়েছে, সেগুলোর তালিকা দেওয়া হয়েছে কাস্টমসকে।