ভারতজুড়ে কৃষকদের বনধ

আন্দোলনরত কৃষকদের ডাকে সারা ভারতে বনধ পালিত হচ্ছে আজ। কেন্দ্রীয় সকারের নতুন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতেই এই বনধ। সাধারণ মানুষের সমস্যা তৈরি না করেই এই বনধ পালিত হবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কিষাণ সংগঠন।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভারতজুড়ে বনধ চলবে। বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে আন্দোলনকারী কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। তবে এদিন বনধ চলাকালে কোনো রাজনৈতিক দলকে মঞ্চে ওঠার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে কৃষকরা।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বনধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে রেল অবরোধ। লখনৌয়ের গ্রামীণ এলাকায় বনধ ঘিরে অস্থিতীশলতা রুখতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে বনধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল হয়। বহু জায়গায় দোকানপাট এবং বাজার খোলেনি। পশ্চিমবগের বাঁকুড়াসহ একাধিক জেলায় বেসরকারি বাস রাস্তায় নামেনি। কলকাতার রাস্তায়ও বেসরকারি বাসের সংখ্যা কম।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানী দিল্লিতে বনধের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। বনধের জেরে রাজধানীতে ব্যাংক পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও ছিল কম। তবে সকাল পর্যন্ত বনধ ঘিরে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ বা অস্থিতিশীলতার কোনো খবর মেলেনি।   

ভারতে প্রায় তিন মাস ধরে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছে কৃষকরা। প্রথমে পাঞ্জাব রাজ্যে এই আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল। পরে সেই আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। বর্তমানে দিল্লি-পাঞ্জাব এবং দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কৃষক।

পাশাপাশি, উত্তরাখন্ড এবং উত্তরপ্রদেশ থেকেও দলে দলে কৃষক ওই বিক্ষোভ অবস্থানে এসে যোগ দিয়েছে। কৃষকদের এই বিক্ষোভ ঠেকাতে শুরু থেকে পুলিশ লাঠিপেটা ও জলকামান ব্যাবহার করে পুলিশ। যদিও তাতে দমানো যায়নি কৃষকদের। এর আগেও ভারতে আন্দোলরত কৃষকদের সমর্থনে বাম সংগঠনগুলির ডাকে ভারত বনধ পালিত হয়েছে।

কোনো ধরনের তর্ক-বিতর্ক ছাড়াই শুধু সংখ্যার জোরে বিতর্কিত কৃষি বিল পাশ করিয়ে নেয় মোদি সরকার। তারপর গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা আইনে পরিণত হয়ে যায়।

মূলত তিনটি আইন নিয়েই আপত্তি জানিয়েছেন কৃষকরা। যার মধ্যে হলো, সংশোধিত অত্যাবশ্যক পণ্য আইন। কৃষকদের ক্ষমতায়ন, ন্যায্যমূল্যের আশ্বাস এবং খামার পরিষেবা চুক্তির আইন এবং বাজার বা মান্ডির বাইরে যেকোনো ব্যবসায়ী বা করপোরেট সংস্থার কাছে কৃষকদের ফল বিক্রি করার অধিকার।

এই আইনে নূন্যতম সহায়ক মূল্যের কথা নেই বলে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ভারতের কৃষকরা। তাদের আশঙ্কা, প্রথমেই বেশি দাম হেঁকে তাদের প্রলোভিত করতে পারে বড় বড় কোম্পানিগুলো। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের বালাই না থাকায় ফসল কেনার ক্ষেত্রে সরকার গড়িমসি করতে পারে। ঠিক মতো অর্থ পাওয়া না গেলে মান্ডিতে যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন কৃষকরা। সেক্ষেত্রে সব কৃষিপণ্যের একমাত্র ক্রেতা হতে হবে বড় বড় কোম্পানিগুলোকে। বাধ্য হয়ে তাই তাদের ঠিক করে দেওয়া দামেই ফসল বিক্রি করতে হবে কৃষকদের। এ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হলেও আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই অনড় কৃষকরা।