তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাচারের মামলায় পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে ধরতে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন বা ইন্টারপোলকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে বলে হাইকোর্টকে অবহিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে পি কে হালদারের দুর্নীতির মামলা তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে দুদকের প্রতিবেদন দাখিলের সময় দুদকের আইনজীবী এ তথ্য জানান।
পরে আদালত আগামী ৩ জানুয়ারি এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক।
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর বিদেশে পালিয়ে থাকা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি না করায় বিচারিক আদালতের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই দিন বিচারিক আদালত পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন আদালত।
গত ২১ জানুয়ারি পি কে হালদারসহ ২০ জনের সব সম্পদ, ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট আটকানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। যেসব আসামির না পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন- কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক জহিরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, বাসুদেব ব্যানার্জি, পাপিয়া ব্যানার্জি, মোমতাজ বেগম, নওশেরুল ইসলাম, আনোয়ারুল কবির, প্রকৌশলী নুরুজ্জামান, আবুল হাসেম, মোঃ রাশেদুল হক, পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, স্ত্রী সুস্মিতা সাহা, ভাই প্রিতোষ কুমার হালদার, চাচাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ ও পি কে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডে বিনিয়োগকারী দুজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ তাঁদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট আটকানোর আদেশ দেন।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, পুরো নাম প্রশান্ত কুমার হালদার। সংক্ষিপ্ত রূপ পি কে হালদার। তিনি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটির বেশি টাকা লোপাট করেছেন। প্রথমে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) ইত্যাদি।
অভিযোগ রয়েছে, ওইসব প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন ও নতুন আরো কিছু কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছেন পি কে হালদার। নিজেও পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।
ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে মামলা করেন। তবে মামলা করার আগেই পালিয়ে যান পি কে হালদার।
পরে গত ১৯ নভেম্বর পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন করেছিল আইএলএফএসএল। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত জানিয়েছিলেন, পি কে হালদার কবে, কখন, কীভাবে দেশে ফিরতে চান, তা আইএলএফএসএল লিখিতভাবে জানালে সে বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে।
পরে পি কে হালদারের দেশে ফেরার বিষয়টি গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্টকে জানানো হয়। পি কে হালদারের প্রতিষ্ঠান আইএলএফএসএলের পক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়, ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকা আসার জন্য টিকিট কেটেছেন তিনি। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। পরে সার্বিক দিক বিবেচনার পর পি কে হালদারকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পি কে হালদার দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের আইজি এবং ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি কারাগারে থাকা অবস্থায় পি কে হালদার যেন অর্থ পরিশোধের সুযোগ পান, সেই বিষয়ে সুযোগ দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে পরে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আর দেশে ফেরেননি তিনি।