বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোণঠাসা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানেও আর মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকা হয় না। দলের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের শোকজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন হাফিজ। বিএনপি এতো বড় দল হয়েও এতো বছর ধরে কেনো ক্ষমতার বাইরে রয়েছে, খোদ বিএনপি নেতাদেরকেই তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
দলীয় হাইকমান্ডের প্রকাশ্য সমালোচনা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএনপি। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত ওই নোটিশে দলীয় নির্দেশনা পালনে নির্লিপ্ততার অভিযোগ তোলা হয়।
এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে বনানীর নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হাফিজ উদ্দিন। শুরুতেই আদিষ্ট না হয়ে কীভাবে একজন যুগ্ম-মহাসচিব দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে আক্রমণাত্মক ভাষায় শোকজ করেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, বিষয়টি অপমানজনক।
হাফিজ বলেন, জিয়াউর রহমান যদি স্বর্গে গিয়ে থাকেন, আর সেখানে বসে যদি শোনেন মেজর হাফিজকে শোকজ করা হয়েছে, তিনিও লজ্জা পাবেন।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, পায়ের ব্যথার সমস্যায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে যেতে পারিনি, আর এজন্য ৭২ বছরের একজন বৃদ্ধকে শোকজ করতে হবে?
তিনি বলেন, একাত্তরে রণাঙ্গনে সরাসরি লড়াই করেছি। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। কারো মুখের কথায় স্বাধীনতা আসেনি।
কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবের কপি দেয়া হয় সাংবাদিকদের। এতে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, আমি কখনোই বেগম খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানকে নিয়ে কোনো আপত্তিকর কথা বলিনি। আমি বেগম জিয়ার অনুগত। কখনো যদি রাজনীতি ছেড়েও দিই, তবু অন্য দল করবো না বরং জাতীয়তাবাদী চেতনাই লালন করে যাবো।
বিএনপি’র কতিপয় নেতাকে ‘টাউট-বাটবার’ আখ্যায়িত করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, সুবিধাবাদী একটি পক্ষ আমাকে সংস্কারপন্থী তকমা দিয়ে দল থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। তিনি প্রশ্ন করেন, সংস্কার কি খারাপ জিনিস?
দলে মুক্তিযোদ্ধাদের কোণঠাসা করার ষড়যন্ত্র চলছে বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ। তিনি বলেন, আগে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাকে আমন্ত্রণ করা হতো, কিন্তু এক/দেড় বছর ধরে সেটা করা হচ্ছে না। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের দূরে সরিয়ে রাখারই প্রক্রিয়া।
দলের নেতাকর্মীদের অনুরোধে আপাতত তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন বলেও জানান বিএনপি’র এই ভাইস চেয়ারম্যান।
এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রয়োজন মনে করলে দল যেকোনো নেতাকে শোকজ করতে পারে। তবে কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার অধিকার কেউই রাখে না।