রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মার তীরে এক মাসের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে নৌবন্দর। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে বন্দরটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলার সুলতানগঞ্জের এ বন্দর থেকে পদ্মা হয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক সম্প্রতি সুলতানগঞ্জে নৌবন্দরের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান স্পিডবোটে করে পদ্মা নদীর ভারতীয় সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত দেখে আসেন এবং পরে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
নদীপথ পরিদর্শন শেষে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে নৌপথ চালু করলে দুই দেশই উপকৃত হবে। আমরা নদীর নাব্যতাসহ সবকিছু দেখে গেলাম। খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এক মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এ নৌপথ চালু করতে চাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুহিদুল ইসলাম ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।
এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, এক সময় গোদাগাড়ী দিয়ে ভারতের সঙ্গে পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো। সেটা অনেক আগে বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার সেটি চালু হলে খুব ভালো হবে। আগে এ পথে পাটজাত পণ্য ভারতে যেত। আবারও সেসব পণ্য পাঠানো যাবে। এ ছাড়া, রাজশাহী অঞ্চলে প্রচুর মাছ উৎপাদন হচ্ছে। সেই মাছও ভারতে রপ্তানি করা যাবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তাই আমরা চাই, দ্রুতই যেন নৌবন্দরটি চালু হয়।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর এ নৌপথে বাণিজ্য চালুর বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। এ পথে এক মাসের মধ্যেই পরীক্ষামূলক চালান পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা এখন নৌপথটির অবকাঠামো পর্যালোচনা করছেন।
সংস্থার কর্মকর্তারা আরো বলছেন, নৌপথটি চালু হলে ভারতের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য যোগাযোগ আরো সহজ হবে। কেননা নৌপথে একসঙ্গে বিপুল পণ্য পরিবহন করা যায়।
রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটারের একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও তা কার্যকর নেই। এখন নতুন পথটি সংক্ষিপ্ত করে সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এ পথের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। এতে অনেকটা আড়াআড়িভাবে পদ্মা নদী পাড়ি দেবে পণ্যবাহী নৌযান।
শুষ্ক মৌসুমে এ নৌপথে প্রতি যানে ২০০-৩০০ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে। আর বর্ষা মৌসুমে নাব্যতা বেশি থাকলেও প্রমত্তা পদ্মায় স্রোতও অধিক থাকে। তাই তখন অবশ্য পণ্য পরিবহন কিছুটা কঠিন হবে।
এরই মধ্যে গোদাগাড়ী এলাকায় একটি শুল্ক কার্যালয় চালুর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো দেশের বড় বড় প্রকল্পে মুর্শিদাবাদের পাকুর পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বেশ উন্নতমানের পাথর। এখন সড়কপথে এ পাথর আমদানি করতে খরচ বেশি পড়ছে। গোদাগাড়ী-মায়া নৌপথটি মূলত পাকুর পাথর আমদানিতে বেশি ব্যবহার হবে।