ঢাকা: পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে শরণার্থী শিবির তুলে নিয়েছে বেলারুশ। বেলারুশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার বেলারুশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে সব শরণার্থী শিবির খালি করা হয়েছে।
পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে শরণার্থী শিবির তুলে নিয়েছে বেলারুশ। বেলারুশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার বেলারুশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে সব শরণার্থী শিবির খালি করা হয়েছে।
শরণার্থী ইস্যুতে প্রতিবেশী লিথুনিয়া ও পোল্যান্ডের সঙ্গে বেলারুশের চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে এসেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। শরণার্থী ইস্যুতে প্রতিবেশী লিথুনিয়া ও পোল্যান্ডের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে তিনি লুকাশেঙ্কুকে অনুরোধ করেন তারা যেন দ্রুত শরণার্থী শিবির তুলে নেন।
মের্কেলের সঙ্গে আলোচনার সময় লুঙ্কাশেঙ্কু প্রস্তাব দেন, বেলারুশে থাকা শরণার্থীদের মধ্যে ২ হাজার জনকে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন আশ্রয় দেয়, তবে বাকি ৫০০ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এতে সঙ্কট নিরসন হতে পারে।
তবে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি মের্কেল। জার্মানির অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী হোস্ট সেইহোফা বলেন, শরণার্থী সংখ্যা নিয়ে লুঙ্কাশেঙ্কু যে তথ্য দিয়েছেন তাতে ‘গলদ’ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা যদি বেলারুশে থাকা শরণার্থীদের গ্রহণ করি এবং লুকাশেঙ্কুর চাপের কাছে মাথা নত করি, তার মানে হবে বিশ্বাসঘাতক নীতির বাস্তবায়ন করছি আমরা। সেটা আমরা করতে পারি না।’এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, বেলারুশ শরণার্থী সঙ্কটের কোনো স্থায়ী সমাধান না হলে তারা কোনো আলোচনায় বসতে রাজি নয়।
ইইউ’র এক মুখপাত্র বলেন, ‘বেলারুশের এই সঙ্কট রাষ্ট্রীয়ভাবেই তৈরি করা হয়েছে। এ সঙ্কট সমাধানের একমাত্র দায়িত্ব লুঙ্কাশেঙ্কুর।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখোর কণ্ঠেও একই সুর। তিনি বলেছেন, লুকাশেঙ্কেুর ওপর চাপ বাড়াতে হবে। তবে এটা নিশ্চিত করতে হবে, শরণার্থীদের মধ্যে সক্ষম ব্যক্তিদের এখন পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিজ দেশেই ফেরত পাঠাতে হবে।
তবে পোল্যান্ড সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, শরণার্থী শিবির খালি করা হলেও এতে নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই। কারণ এখনও তারা দলে দলে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করছে। রাতের অন্ধকারে তারা সীমান্তের বেড়া টপকে পোল্যান্ডে আসার চেষ্টা করছে। কখনও তারা সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। সীমান্তে কড়া নজর রাখছি আমরা।
পোলিশ সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এইডের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, গত বৃহস্পতিবার বেলারুশ সীমান্ত থেকে শরণার্থী শিবির তুলে নেওয়ার সময় সংঘাতে এক দম্পতি গুরুতর আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে সীমান্তের জঙ্গলে এক বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বেলারুশের শরণার্থী সঙ্কটে এ নিয়ে ৮ জনের মৃত্যু হল।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শরণার্থীদের মধ্যে ইরাকিরা ইতোমধ্যে ইরাকে ফিরতে শুরু করছেন। মিনস্ক বিমানবন্দরে তাদের ভিড় বাড়ছে, যাকে শরণার্থী সঙ্কট সমাধানের পথে প্রথম ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। গত আগস্টের পর তারা আবার ফিরতে শুরু করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো অভিযোগ করছে, সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে বেলারুশ এখন পোল্যান্ড ও লিথুনিয়া সীমান্ত দিয়ে তাদের ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে শরণার্থীদের ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু মিনস্ক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিকে লিথুনিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নসিদা বলেন, বেলারুশের এমন কর্মকাণ্ডে তারা কঠোরতম পদক্ষেপ নেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইইউও বেলারুশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সীমান্ত সংকটের প্রেক্ষাপটে তা আরও জোরদারও করা হতে পারে।ইইউ বলছে, এবার তারা বিমানপথেও বেলারুশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
গিতানাস নসিদা বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের পর আমরা দেখছি, মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেলারুশে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেই দেশগুলো থেকে বেলারুশের নাগরিকরা ফিরে আসছে।’
নাইজেরিয়া সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, ‘আমরা যখন বেলারুশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি, তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো ও তার প্রশাসন শরণার্থীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
গত বছর বেলারুশের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো নির্বাচনে জয় ঘোষণা করা, দেশে ভিন্নমত দমন এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের গ্রেপ্তার করার পর ইইউ-বেলারুশ সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রভাত নিউজ/এবিএস