নবাব বংশের পরিচয় প্রদান, নম্র-ভদ্র কথাবার্তা, ধার্মিক আচরণ, গানম্যান রাখা ও বিলাসী জীবনযাপন দেখিয়ে ভিআইপি পরিচয় দেওয়া ছিল তাঁর কৌশল। আর এসব কৌশল ব্যবহার করে ঢাকার নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহর নাতি পরিচয় দেওয়া আলী হাসান আসকারী করতেন প্রতারণামূলক কাজ। হাতিয়ে নিতেন কোটি কোটি টাকা।
এই যেমন, কোনো এক নতুন স্থানে গেলে সেখানে তাঁর সঙ্গে দেহরক্ষী হিসেবে গানম্যান রাখতেন। বোঝাতেন, তিনি বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এ ছাড়া নম্র-ভদ্র আর ধার্মিক আচরণ করে আসকারী বোঝাতেন, তিনি ভালো মানুষ। এগুলোই তাঁর প্রতারণার হাতিয়ার বা কৌশল।
আলী হাসান আসকারীর কাছে প্রতারিত হয়েছেন ফেনীর স্কুলশিক্ষক আবদুল আহাদ সালমান। তিনি চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে তিন কোটি ৩৪ লাখ নিয়ে দিয়েছিলেন আসকারীর কাছে। ওই পুরো টাকাই হাতিয়ে নিয়েছেন আসকারী। প্রতারণার অভিযোগে সালমান রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসকারী এখন কারাগারে আছেন।
আহাদ সালমান বলেন, আসকারীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি নবাবের নাতি পরিচয় দেন। পরিচয় দেন ধার্মিক মানুষ হিসেবে। এ ছাড়া সে সময় তাঁর সঙ্গে বডিগার্ড ছিলেন। বডিগার্ডের কাছে ওয়াকিটকি ও পিস্তল ছিল। এসব দেখিয়ে তিনি আমার বিশ্বাস অর্জন করেন। বলতে পারেন, একপর্যায়ে আমি তাঁর আশেক হয়ে যাই। তাঁর আচরণে আমি ভীষণ মুগ্ধ ছিলাম। আমি বুঝতেই পারিনি এমন বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হতে যাচ্ছি।
শুধু আহাদ সালমান নয়, এমন অনেক মানুষের সঙ্গে হাসান আসকারী প্রতারণা করেছেন। তাঁদের সঙ্গেও তিনি তাঁর বিলাসী ও চাকচিক্য জীবন দেখাতেন। এ ছাড়া তিনি রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের কাছে যখন যেতেন, তখনও গানম্যান রাখতেন। পরিচয় দিতেন নবাব বংশের শেষ নবাব হিসেবে। এসব ব্যক্তির আশপাশে গিয়ে তিনি ছবি তুলতেন। সেসব ছবিকে ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন।
এসব কথা বলছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপকমিশনার মো: মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম বলেন, হাসান আসকারীকে আমরা তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছিলাম। সে সময় তাঁর বডিগার্ড ও গানম্যানের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তখন আসকারী বলেছিলেন, ভিআইপি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতেই তিনি গানম্যান ব্যবহার করতেন। আসকারী আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন, এসব গানম্যান তিনি ভাড়া করে ব্যবহার করতেন। ভাড়া করা গানম্যানদের দিনপ্রতি দুই হাজার টাকা দিতেন আসকারী। সঙ্গে খাওয়া ফ্রি দিতেন। কাজ শেষ হলে গানম্যানদের পাঠিয়ে দিতেন তিনি।
উপকমিশনার বলেন, ঢাকার একটি কোম্পানি থেকে আসকারী যখন প্রয়োজন তখন গানম্যান নিতেন। আমাদের কাছে সেই কোম্পানির নামও বলেছেন। আমরা ওই কোম্পানির ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। আসকারী রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে দেখা করতেন। দেখা করার উদ্দেশ্য ছিল মূলত ছবি তোলা। ওইসব ছবি দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাততেন আসকারী। পরিচয় দিতেন ছবি তোলা সেসব ব্যক্তি তাঁর আত্মীয় কিংবা ভালো সম্পর্কের। সেসব স্থানে যাওয়ার সময়ও তিনি গানম্যান ব্যবহার করতেন।