হাসপাতাল ভাইকে ভর্তি নেয়নি, মৃত্যুর পর মাহির ক্ষোভ

ছোট পর্দার দর্শকপ্রিয় মুখ সামিরা খান মাহি ভালো নেই। রোববার (২৯ জুন) জানিয়েছিলেন তার কাজিন আবু শাহেদ রাসেল মারা গেছেন। তবে মাহি মনে করছেন, হত্যা করা হয়েছে তাকে। এর পেছনেও কারণ দেখিয়েছেন তিনি। এনেছেন যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ।

নিজের ফেসবুকে মাহি লিখেছেন, আমি গভীর শোকের সাথে জানাচ্ছি, আমার কাজিন ছোট ভাই, যে আমাদের সাথে বাসায় থাকত একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। একটি নোয়া গাড়ি দু-তিন বার ধাক্কা দিয়ে ওকে ফেলে দেয়, গাড়িটি পানিতে পড়ে যায়। প্রায় ১৫ মিনিট পর দুইজন মানুষ ওকে গাড়ির গ্লাস ভেঙে পানির নিচ থেকে তোলে, কিন্তু এরপর যা ঘটেছে, সেটা আরও ভয়ংকর।

অভিনেত্রী লেখেন, হাসপাতাল ওকে ভর্তি নেয়নি, কারণ ওরা চিন্তা করছিল কোথাকার কে এসেছে, বিল দেবে কি না, পরিবার কারা—এসব হিসাব। একজন মানুষের জীবন তাদের কাছে মূল্যবান ছিল না। এরপর ওকে নেওয়া হয় সরকারি হাসপাতালে, কিন্তু সেখানকার ব্যবস্থাপনাও অগোছালো। যথাযথ চিকিৎসা হয়নি।

প্রশ্ন তুলে সামিরা মাহি বলেন, আমার প্রশ্ন, প্রথমে কী আসা উচিত—একজন মানুষের জীবন, নাকি টাকা-পয়সার হিসাব? একটা মানুষ রাস্তায় পড়ে থাকে, আর একটি গাড়িও দাঁড়ায় না—এ কেমন মানবতা? মানুষ কি সত্যিই এতটা নির্দয় হয়ে গেছে?

সবশেষে লেখেন, এই সমাজ, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, মনুষ্যত্ব—সবকিছু আজ প্রশ্নের মুখে। আমার ভাই আর নেই, কিন্তু আমি চাই না অন্য কারও পরিবারের সাথে এমন হোক। আজকে আমার ভাই, কাল আপনার। মানবতা ফিরে আসুক, মানুষের প্রাণই হোক অগ্রাধিকার।

এদিকে দেশের একটি গণমাধ্যমকে মাহি জানান, গেল শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তার কাজিন আবু শাহেদ রাসেল। ফেনি থেকে ঢাকা ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলেন পড়ে প্রাণ হারান তিনি।

আমার ভাইকে মেরে ফেলল, কিছুই করতে পারলাম না: সামিরা মাহি

মাহি বলেন, ও  দুই দিনের জন্য ফেনী গিয়েছিল বন্ধুর বিয়ে খেতে। ফেনী থেকে ফিরছিল। কুমিল্লার ময়নামতি ক্রস করার পর দুর্ঘটনা ঘটে। রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে ওর গাড়িকে বড় একটি গাড়ি ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়। অনেক পানি ছিল। মূল রাস্তা থেকে পুকুরটা দেখাও যাচ্ছিল না। পাশাপাশি দুর্ঘটনার সময় আর কোনো গাড়িও ছিল না সেখানে। একটা বাইক ছিল। ওই বাইক আরোহীরা ওকে দেখেন। ওনারাই নিকটস্থ হাসপাতালে নেন। ওই হাসপাতালে না রাখলে পাশের আরেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে এক ঘণ্টার মতো বেঁচে ছিল আমার কাজিন।

কাঁদতে কাঁদতে মাহি বলেন, ওকে যে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল সেখানকার লোকজন বলেছেন ইন্টার্নাল ব্লিডিংয়ের কারণে মৃত্যু হয়েছে। অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল কিন্তু রাখতে পারছিল না। কারণ, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল।

শাহেদের সঙ্গে ছিল মাহির বাগদত্তা সাদাত শাফি নাবিলের ভিজিটিং কার্ড। উদ্ধারকারীরা ওই কার্ড থেকে নাম্বার নিয়ে শাফির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে শাহেদের মৃত্যুসংবাদ দেন।

এদিকে ভাই হারিয়ে স্তব্ধ মাহি। আইনি পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে বলেন, কোন গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে জানি না। পেছনে থেকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেছে। কোন গাড়ি, কী গাড়ি, কিছুই জানা নেই। তাছাড়া গতকাল রোবরাব রাত সাড়ে ৯টার দিকে দাফন হয়েছে। আইনি পদক্ষেপ নিতে হলে লাশের পোস্ট মর্টেম প্রয়োজন হয়। আমরা চাইনি কোনো কাটাছেড়া করা হোক।