২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবাংলায় চমকের পর চমক থাকছে। একুশের বিধানসভাতে পশ্চিমবাংলায় বাম কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে পারে বিহারের লালু প্রসাদের দল আরজেডি। অন্তত আরজেডি নেতা তথা লালু পুত্র তেজস্বী যাদবের কথাতে তেমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তেজস্বী জানিয়েছেন, বিহারে যেমন আমাদের সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গেও তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। ফলে ২০২১ এর নির্বাচনে আমরা পশ্চিমবঙ্গে জোট করে লড়তে চাই। আর তেজস্বীর এই বক্তব্যেই বাংলা বাজারে জল্পনার পারদ শক্ত করেছে। তাহলে কি আরজেডি বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস নাকি তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ে লড়তে চায়! বাংলায় বিহারী হিন্দী ভাষীদের ভোট যে একটি বড়ো ফ্যাক্টর তা অজানা নয় কারোরই।
সেখানে দাঁড়িয়ে আরজেডি কি সেই ভোটকে টার্গেট করতে চাইছে একুশের নির্বাচনে? ২০০০ সাল থেকে বাংলায় আরজেডি বড়োবাজার (জোড়াসাকো) এবং খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্রে লড়াই করে আসছে। যার মধ্যে ২০০৬ সালে বড়বাজার আসনটিও জিতে নেয় আরজেডি। আরজেডি বাংলায় জোট করে লড়াইতে নামলে তা বিজেপির পক্ষে যে স্বস্তির হবে না, তা মেনে নিয়েছেন রাজনৈতিক মহল। তবে আগাম হাওয়া বুঝেই বিজেপিও নিজেদের সাজিয়ে রেখেছে। বিহারে এনডিএ জোটে থাকা নীতিশ কুমারের দল জেডিইউ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় ৭৫ টি আসনে প্রার্থী দিতে চলেছে বলে শুনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলার মাটিতে ভোট ভাগাভাগি নিয়ে আরজেডি যদি তৃণমূল কিংবা সিপিএম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাধে তাহলে নীতিশের দল বিজেপির পক্ষে গিয়ে লড়াইতে নামতে প্রস্তুত।
যার ফলে বাংলাতেও বিহারের কায়দায় মহাজোট এবং এনডিএর ফর্মূলায় নিঃশব্দ লড়াইয়ের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলায় একুশের বিধানসভাতে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) জানিয়ে দিয়েছে তারা অন্তত ৩০ টি আসনে প্রার্থী দেবে। পাশাপাশি ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের দল জেএমএম জানিয়ে দিয়েছে, ২০২১ সালের বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে তারা জঙ্গলমহল সহ একাধিক স্থানে প্রার্থী দিতে চলেছে।
সেই লক্ষ্যে জানুয়ারি মাসে হেমন্ত সোরেন এবং শিবু সোরেনরা বাংলায় জনসভা করতে আসবেন বলেও জানা যাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের ধারনা, হেমন্ত সোরেনের জেএমএম বাংলার মাটিতে লড়াইতে নামলে মূলত আদিবাসী এবং দলিত শ্রেণীর মানুষদের উপরে প্রভাব পড়তে পারে। আর সেটা হলে কতটা স্বস্তিতে থাকবেন তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা নিয়েই সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
মূলত আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়কে টার্গেট করে জেএমএম সুপ্রিমো হেমন্ত সোরেন যে পূর্ণশক্তি দিয়ে বাংলাতে ঝাঁপিয়ে পরেবেন তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। তারা ঝাড়খন্ডের সীমান্তবর্তী বাংলার এলাকাগুলিকে দখলের লক্ষ্য নিয়েই এগোতে চাইছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারনা।
তার উপর এবারের নির্বাচনে রয়েছে আসাদুদ্দিন ওয়েইসির মিম-এর চোখ রাঙ্গানি। মিম রাজ্যে প্রার্থী দিলে তৃণমূলের পাশাপাশি বাম ও কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ভোট হারানোর একটা আশংকা থেকেই যাচ্ছে। ফলে এবারের নির্বাচনে স্বাভাবিকভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে যেমন চাপ বাড়বে, তেমনি চাপ তৈরি হবে বিজেপির উপরেও। সব মিলিয়ে একুশে বাংলার ভোট রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠবে।