পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে উদ্যোগ

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে নতুন করে উদ‌্যোগ নিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অর্থপাচার সংক্রান্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।  

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের উপায় সংক্রান্ত একই সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে দূতাবাসগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী হতে হবে।

সভায় বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী ও একটি ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহীর বিপুল অঙ্কের অর্থ কানাডায় পাচার ও সেখানকার নাগরিকত্ব নেওয়ার বিষয়ও উঠে আসে।  এছাড়া, সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত ব্যাংকস অব সুইজারল্যান্ড, ২০১৮ শীর্ষক প্রতিবেদন নিয়েও আলোচনা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের  পরিমাণ প্রায় ৬১৭ দশমিক ৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। যা ২০১৭ সালের শেষে ছিল ৪৮১ দশমিক ২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ।

সভায় বলা হয়, দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে গেলে তা ফেরত আনা কঠিন। এ অবস্থায় অর্থপাচার বন্ধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ট্রিগ্রিরিটি (জিএফআই)-এর ট্রেড-রিলেটেড ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ইন ১৩৫ ডেভেলপিং কান্ট্রিজ: ২০০৮-১০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবৈধভাবে অর্থ পাচারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রেড মিস-ইনভয়েসিংয়ের (আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং) মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ২০১৩ সালে ৯৬০ কোটি ডলার, ২০১৪ সালে ৬৩০ কোটি ডলার ও ২০১৫ সালে ৫৯০ কোটি ডলার অবৈধভাবে দেশের বাইরে চলে গেছে। 

বাংলাদেশ থেকে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে পাচার হওয়া অর্থের তথ্য-উপাত্ত ওই প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতে, হাল-নাগাদ উপাত্ত না-পাওয়া গেলেও ট্রেড মিস-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার ক্রমশ কমছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব দেশে অর্থপাচার হয়ে যায় সেসব দেশের আইনগত কারণে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে  দেশ থেকে অর্থপাচার হয়ে গেলে তা ফেরত আনা কঠিন হয়ে পড়ে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত দিতে উন্নত দেশগুলোর ভূমিকা স্বচ্ছ নয়। তাদের আগ্রহ ও অঙ্গীকারের মধ্যে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এরপরও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।