আত্মগোপনে থেকে নাটক সাজান জবি ছাত্রী তিথী, রিমান্ড মঞ্জুর

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাময়িক বহিষ্কৃত ছাত্রী তিথী সরকার নিখোঁজ ছিলেন না। তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থেকে গ্রেপ্তার বা অপহরণের নাটক সাজান। তাঁর ধারণা ছিল এভাবে আত্মগোপনে থেকে তাঁর অপহরণের দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে তিনি রেহাই পাবেন এবং ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে ধাবিত হবে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায়।

তিথী সরকারকে গতকাল বুধবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। সেদিনই দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাঁর স্বামী শিপলু মল্লিককে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিথী সরকারকে এক দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় আদালত তাঁর স্বামী শিপলু মল্লিককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আজ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান এই আদেশ দেন।

আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মোহাম্মদ শাহ-আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাজধানীর পল্টন থানায় করা মামলায় আজ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গ্রেপ্তার তিথী সরকার ও তাঁর স্বামী শিপলু মল্লিককে হাজির করে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক তিথী সরকারকে এক দিনের রিমান্ড এবং তাঁর স্বামীর রিমান্ড নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জামিল আহমদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভিযুক্ত ছাত্রী ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট, মন্তব্য ও তথ্য শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সেই ছাত্রীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে একজন কারাগারে আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলাও দায়ের করা হবে।’

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত ৩১ অক্টোবর সিআইডির সাইবার মনিটরিং টিম লক্ষ্য করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ফেসবুকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথী সরকারকে সিআইডির মালিবাগ অফিসের চারতলা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার’ শীর্ষক একটি মিথ্যা পোস্ট  শেয়ার করা হয়। এই সংবাদটি দ্রুত বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজে ভাইরাল করা হয়। প্রকৃতপক্ষে সিআইডির অভ্যন্তরে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।

আরো জানা যায়, এসব গুজব রটনাকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কার্যক্রম শুরু করে সাইবার পুলিশ, সিআইডি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরাস্থ বনশ্রী এলাকা থেকে অন্যতম গুজব রটনাকারী নিরঞ্জন বড়ালকে (৫০) শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে সাইবার পুলিশ সেন্টার। এ বিষয়ে নিরঞ্জন বড়ালসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়।

এজাহারে বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তিথী সরকার তাঁর ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় উসকানিমূলক বিভিন্ন পোস্ট, কমেন্ট ও তথ্য শেয়ার করেন, যার ফলশ্রুতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সমাবেশ করে। এ সম্পর্কিত ভবিষ্যৎ বিপদ এড়াতে এবং নিজেকে নিরাপদ রাখতে তার সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর পরামর্শে তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে মর্মে গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় গত ২৬ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিথী সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদকের পদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।

সিআইডি আজ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানায়, গত ২৭ অক্টোবর তিথী সরকারের বড় বোন স্মৃতি রাণী সরকার পল্লবী থানায় তিথী সরকার নিখোঁজ সংক্রান্তে একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৫ অক্টোবর সকাল ৯টার পরে তিথী সরকার মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন।

এর পরই তদন্তে নামে পুলিশ। সাইবার পুলিশ সেন্টার তদন্ত করতে গিয়ে খবর পায়, তিথী সরকার স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থেকে গ্রেপ্তার/অপহরণের নাটক সাজাচ্ছেন। তাঁর ধারণা ছিল, এভাবে আত্মগোপনে থেকে অপহরণের দায়ভার অন্যের ওপরে চাপিয়ে দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে তিনি রেহাই পাবেন এবং ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে ধাবিত হবে।

পরবর্তী সময়ে আত্মগোপনে থাকা তিথী সরকারের অবস্থান শনাক্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের লক্ষ্যে সাইবার পুলিশের একটি বিশেষ টিম অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও গোপন সোর্সের  দেওয়া তথ্যানুযায়ী গতকাল বুধবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন দক্ষিণ শিলমান্ধি পাঁচদোনা এলাকা থেকে তিথী সরকারকে আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তিথী সরকার জানান, গত ২৫ অক্টোবর মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বের হয়ে তাঁর প্রেমিক শিপলু মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাগেরহাট যান। সেখানে শিপলু মল্লিককে বিয়ে করে বাগেরহাটে অবস্থান করে ৯ নভেম্বর ঢাকায় আসেন। পরে শিপলু মল্লিকের নরসিংদীর দূরসম্পর্কের চাচা দেবাশীষ রায়ের বাসায় অবস্থান করার সময়ে সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের দুটি টিম অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গতকাল সেখান থেকে তিথী সরকারকে আটক করে। এর আগে গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার গুলিস্তানের কাপ্তান বাজারের ইলেকট্রনিক মার্কেট থেকে শিপলু মল্লিককে আটক করা হয়।

সিআইডি জানিয়েছে, নিরঞ্জন বড়াল তিথী সরকারকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট বিভ্রান্তিকর ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো এবং তিথী সরকার নিজে থেকে আত্মগোপনে যাওয়া এবং তিথী সরকারের যাবতীয় কাজে শিপলু মল্লিকের সহযোগিতা করা পূর্বপরিকল্পিত এবং একই সূত্রে গাঁথা।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। তারা যেকোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা, সহিংসতা ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে। যেকোনো ধরনের তথ্য ও সংবাদ সঠিকভাবে যাচাই ছাড়া বিশ্বাস না করতে সাধারণ জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে সাইবার পুলিশ সেন্টার। এ ধরনের কোনো গুজব, অপরাধের তথ্য থাকলে তা জানাতে অনুরোধ করেছে।

সাইবার পুলিশ, সিআইডির সঙ্গে যোগাযোগ করতে ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/cpccidbdpolice

ফোন : ০১৩২০০১০১৪৮