দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে

দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু নির্মাণের মহাকর্মযজ্ঞ শুরু হচ্ছে আজ রোববার (২৯ নভেম্বর) । ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিশেষায়িত এই সেতুটি দেশের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে রেল সংযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে বিদ্যমান লাইনের সক্ষমতা সংকট ও গতির নিয়ন্ত্রণাদেশে আরও একটি নতুন সেতু নির্মাণের বিষয়টি সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রকল্পটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। 

১৯৯৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করা হয় যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় ও উপমহাদেশের অন্যতম প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু সেতু। শুরুতে পরিকল্পনায় না থাকলেও পরবর্তীতে এর নকশায় যোগ করা হয় রেল চলাচলের বিষয়টি। ওই বছরের ২৩ জুন থেকে আজ পর্যন্ত সেতুটিতে রেলগাড়ি চলছে ঠিকই; তবে তা ঢিমেতালে, কোনোমতে।

২০০৮ সালে সেতুটিতে প্রথমবার ফাটল দেখা দেয়। এরপর থেকে এতে রেল চলাচলের গতিও কমিয়ে আনা হয়। এখন সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে এই সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। প্রতিদিন ২২টি ট্রেন চলার কথা থাকলেও এখন চলে ৪৪টি ট্রেন অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই।


এত সব জটিলতা নিরসনে ২০১৬ সালে যমুনা নদীতে বর্তমান সেতুর পাশে উত্তরেই ৩০০ মিটার উজানে একটি বিশেষায়িত রেলসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে সরকার। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার এ ডুয়েলগেজ এর ডাবল ট্র্যাকের সেতুটি নির্মাণ করা হবে শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য।

এই সেতুটি নির্মাণে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেবে সহযোগিতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোর-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। সেতুটির পূর্ব অংশ নির্মাণ করবে ওবায়শি করপোরেশন, টিওএ করপোরেশন এবং জেএফই এবং আইএইচআই এবং এসএমসিসির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হবে পশ্চিম অংশ। সেতু দুই প্রান্তে শূন্য দশমিক ৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, শূন্য সাত দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচসহ মোট ৩০ কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে।

বর্তমান বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে সিঙ্গেল লাইনের সীমাবদ্ধতায় ক্রসিংয়ের জটিলতায় সেতু পার হতে ট্রাফিক সিগন্যালেই নষ্ট হয় যাত্রা পথের বড় একটা সময়। ডাবল লাইনের নতুন সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে ১০০ কিলোমিটার গতিতে যমুনা নদীতে ট্রেন পার হবে। আরও নিবিড় হবে রাজধানীর সঙ্গে কার্যকর ও গতিময় রেল যোগাযোগ।

২০২৪ সাল নাগাদ এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন নীতিনির্ধারকরা। এর ফলে শুধু অভ্যন্তরীণ রেলব্যবস্থাই নয়, সার্ক বিমসটেকসহ আঞ্চলিক উপ-আঞ্চলিক এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সুবিধাও পাবে দেশের মানুষ। পাশাপাশি আর্থিকভাবেও নতুন সম্ভাবনা হবে এই কৌশলগত স্থাপনাটি।