জীবনতরে চাওয়া পাওয়ার হিসাব মেলানো বড় কঠিন কাজ। কখনো হয়তো সেই মাধ্যমটি হয়ে উঠে নতুন কিছু জানার বা বুঝতে পারার ভেতর দিয়ে। সূর্য যেমন আলো দিয়ে থাকে দিনের শুরুতে, বিশ্ব ঠিক তেমনভাবে জানান দেয় ভিন্নতার খবর দিয়ে।
আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে ত্রিস্তান ডি কুনহা দ্বীপ, যেখানে রয়েছে পৃথিবীর সকল দেশের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্য। ভয় পাবার কারণ নেই, সেখানে মানুষের বিচরণ এবং সমান তালে ভ্রমণ প্রিয় মানুষ দ্বীপটিকে দেখার জন্য সবসময় মুখিয়ে থাকে।
ত্রিস্তান দ্বীপে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ২৪৫ জন। মজার বিষয় হলো তাদের মাঝে ১৩৩ জন নারী এবং ১১২ জন পুরুষ। এদের মাঝে রয়েছে সুখের চাবি। মন মাঝিকে কে না পেতে চায় শান্তির মন্দিরে।
দ্বীপটিতে রয়েছে একটি কফি শপ, সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিশাল একটি হল রুম। তথ্য আদান প্রদান করার জন্য রয়েছে পোস্ট অফিস এবং পাব। একটু থেমে গেলেন বুঝি ‘পাব’ আবার কী! পাবটির মূলত নাম অ্যালবেট্রোস।
সামাজিকভাবে সেখানে রয়েছে সকল ধরণের সুবিধা। ছোট এই দ্বীপটি আকারে ছোট্ট হলেও সেখানে রয়েছে স্কুল এবং একটি আধুনিক হাসপাতাল।
মজার বিষয় হলো, আপনি যুদি সেখানে থেকে যান। তাহলে আপনি তাদের সাথে পড়ালেখা করবেন স্কুলে গিয়ে, এবং যাদের সাথে আপনি স্কুলে পড়বেন। তাদের সাথে আপনার বাকি সময় কাটাতে হবে। এমন তথ্য বলেছেন অ্যালেসডিয়ার উইলি। এই ব্যক্তি এক সময় দ্বীপটিতে বসবাস করতেন, হয়তো তার মন মাঝি পাল তুলেছিলো বলে তিনি দ্বীপটি থেকে চলে এসেছেন।
রূপকথা গল্পের মতো বিয়ের আগে স্ত্রী বা স্বামীর সাথে দেখা হয়ে যাবে, কারণ সেখানে মানুষ সংখ্যা খুবই কম তাই দেখা হওয়ার গল্প অধ্যায় শুরু হবে হৃদয় আয়নার গহীনে নয় নয়ন তরে।
ত্রিস্তান দ্বীপটিতে রয়েছে একজন ডাক্তার এবং একজন শিক্ষক যারা ব্রিটেন থেকে সেখানে পোস্টিং পেয়েছেন। দ্বীপের মালিক বা শাসন কর্তা বলতে ব্রিটেনের বাইরে ব্রিটিশ- শাসনাধীন এলাকা বা ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরি।
নীরবতার সাথে সময় কাটাতে গিয়ে বিনোদনের অভাব হবে বলে মনে হয় না। সেখানের পরিবেশ এতোটাই শান্তময় যে পায়ে চলাচলের শব্দ শুনা যাবে। এমনকি ঘাস বড় হওয়ার শব্দও শুনতে পাবেন। এমনটি দাবি করেন হ্যারল্ড গ্রিন ।
ত্রিস্তানে উপকূল-জুড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তাও রয়েছে। সড়কটি ধরে খোলা একটি জায়গায় যাওয়া যায় এবং মুক্ত আসমানের নিচে নিশ্বাসের সাথে বিনিময় করতে পারবেন ভাবনার ছন্দের সাথে ।
সেখানের বাসিন্দারা জানান, একটা সময় ছিল যখন তাদের জীবনের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল গান বাজনা। বাদ্যযন্ত্র বাজানো এবং গান গাওয়াই ছিলো তাদের সুখে থাকা বা বিনোদনের আরেকটি মাধ্যম।
ত্রিস্তান দ্বীপের রোমান্টিকতায় দেখা দিবে একগুচ্ছ আগ্নেয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে নীরবতা যাকে জীবন আয়না বলা যেতে পারে। এসব দ্বীপের মাঝে একটির নাম হলো নাইটিঙ্গেল আইল্যান্ডস। সেখানে কিছু দ্বীপ আছে তবে মানুষের যাওয়া আসা নেই বললেই চলে। তবে সেখানে একটি দ্বীপের নাম দিয়েছে ইনঅ্যাকসিসেবল আইল্যান্ড, সেখানে আবহাওয়াবিদ স্টেশন আছে, সেখানে যারা কাজ করে তারা সকলে পালাক্রমে কাজ করেন।
দ্বীপ যখন রহস্যময় হয়ে উঠে তখন সেখানে সকল তথ্য জানার আগ্রহ থাকে চরম শিখড়ে, এমনি একটি সংবাদ। ত্রিস্তানে প্রথম শিশুর জন্ম, কোভিড মহামারির মাঝে আরেকটি দিক হচ্ছে এর ফলে ত্রিস্তান ডি কুনহা দ্বীপে গত কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম সেখানে একটি শিশুর জন্ম নিয়েছে।
সেখানের নারীরা জটিলতা এড়াতে সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাতে চলে যায়। করোনা আসার পর সেখানে লকডাউন জারি করার কারণে সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ থাকায়। ত্রিস্তানে এই প্রথম শিশুর জন্ম।
ত্রিস্তানে যাওয়ার উপায়,
১. প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে হবে।
২. সেখান থেকে যেতে হবে নৌকা করে।
৩. ১৮ দিন পাড়ি দিতে হবে উত্তাল সমুদ্র। বিপদসংকুল সমুদ্রপথের একটি এই পথ।
৪. নৌকা নিয়ে টিডিসি দ্বীপের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
৫. নৌকা ডাঙ্গায় তুলে রাখতে হবে। যদি না রাখা হয় তাহলে সাগরের পানি ভাসিয়ে নিতে পারে।
৬. সবকিছু করার পর দেখতে পাবেন ত্রিস্তান ডি কুনহার রাজধানী সেভেন।
চলতে চলতে যদি নীরব পাখির সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে মন্দকিসের। ত্রিস্তানের শীতল হাওয়া মনের বিষণ্ণতা কে হার মানিয়ে চলতে থাকুক নীল সাগরের ঢেউর নৃত্যমাতাল পালে।