স্বাধীনতার পর সোনার বাংলা গড়তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু।
আজ শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নগর ভবন প্রাঙ্গনে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, শেখ ফজলুল হক মনি’র ৮১তম জন্মদিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এ কথা বলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শেখ ফজলুল হক মনি সরাসরি রণাঙ্গনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ঘরে বসে কোনো আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। স্বাধীনতার পর সোনার বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই শেখ ফজলুল হক মনি যুবকদের নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আমি ১৯৭৮ সালের জেলখানা থেকে আসার পর বলেছিলাম, জাতি এবং আওয়ামী লীগ হারিয়েছে জাতির পিতাকে, কিন্তু যুবলীগ হারিয়েছে জাতির পিতা এবং যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতাকে, তাই যুবলীগের ক্ষতি বেশি হয়েছে। সুতরাং যুবলীগকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে হবে। বাকশাল গঠনের পর শেখ ফজলুল হক মনি বাকশাল নেতৃবৃন্দকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে এসে দেওয়া বক্তৃতা সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রশংসিত হয়েছিল।

এদিকে শেখ ফজলুল হক মনি’র রাজনীতির হাতেখড়ি বঙ্গবন্ধুর হাতেই হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
রাজনীতিতে শেখ ফজলুল হক মনি’র হাতেখড়ি বঙ্গবন্ধু হাত ধরেই এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল থাকার কথা বর্ণনা করে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বাবা যখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র তখন বঙ্গবন্ধু আমার দাদিকে বললেন-মনিকে আমাকে দাও। দাদি বললেন, খোকা, তোমার পিছেই বাবা-মাসহ আমরা সবাই বিচলিত থাকি, চিন্তায়-দুঃশ্চিন্তায় থাকি। তুমি এখন মনিকে নিতে চাচ্ছো। তাহলে কি হবে? তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন – আমার তো কেউ ছিলনা। আমার মনি’র তো আমি আছি। এই বলে বঙ্গবন্ধু বাবাকে তখন তাঁর সান্নিধ্যে নিয়েছিলেন। সেই থেকে বাবার রাজনীতির শুরু এবং তাঁর রাজনৈতিক হাতেখড়ি জাতির পিতার মাধ্যমেই হয়েছিল।
ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস এ সময় বলেন, এরপর তিনি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্রলীগের নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগ্রামকে বেগবান করার জন্য যে নির্দেশনা জাতির পিতা দিয়েছিলেন তার অন্যতম কর্ণধার ছিলেন শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি। তাঁর মাধ্যমে ছাত্রলীগের তুখোড় নেতৃবৃন্দদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করেছেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম উদ্বুদ্ধ করেছেন।
আমলাতন্ত্র একটি সরকার পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে এবং সরকারের চেতনার সাথে আমলাদের একই চেতনায় জাগ্রত থাকার গুরুত্ব তুলে ধরে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার তাপস এর সময় বলেন, বাবা বলেছিলেন, মুনিবের আমলা দিয়ে মুজিবের শাসন চলতে পারে না। সেটা প্রমাণিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে আমলাতন্ত্র সরকারের সেই আদর্শ-নীতি ধারণ করেছে বলেই আজকে আমরা সেই পর্যায়ে উন্নতি সাধন করতে পারছি। সে বিষয়টা সেই সময় শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি তুলে ধরেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে আমলা হবে, সেই আমলার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে মুজিবের শাসন কায়েম হতে পারে।


এ সময় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয় তা সেই ৭৩-৭৪ সালেও শেখ ফজলুল হক মনি তার লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীরা যদি ধর্মনিরপেক্ষতা নস্যাৎ করতে পারে তবে তারা এই বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করবে। যা তখন তিনি লিখে গিয়েছিলেন তা আজও সত্যি।
অনুষ্ঠানে শেখ ফজলুল হক মনি’র লেখা গীতারায় এবং দূরবীনে দূরদর্শী শীর্ষক পুনঃপ্রকাশিত ২টি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।


অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের পক্ষে ২৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামালউদ্দিন কাবুল, ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নার্গিস রহমান বক্তব্য রাখেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য জান্নাতুল বাকিয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি সাধারণ-সম্পাদক এবং কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।