মাত্র ১২ বছর বয়সে সাম্পাত পাল দেবীকে স্কুল ছাড়িয়ে বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু লেখাপড়া শেখার স্পৃহা তার যায়নি। গ্রামের ছেলেদের কাছ থেকে সে পড়াশোনা শিখতো। তারপর ১৬ বছর বয়সে সে প্রথম গ্রামের এক বউ পেটানো পুরুষকে মুখের ওপর জিজ্ঞেস করে বসেন, কেন বউকে প্রতিদিন নির্যাতন করেন। রেগে গিয়ে পুরুষটি তাকে গালাগাল শুরু করলো। গ্রামের অন্য কয়েকজন নারীর সাহায্যে মাঠের মধ্যে সেদিন লোকটিকে পিটিয়েছিলেন সাম্পাত দেবী। সেই থেকেই শুরু।
এরপর তিনি গ্রামের আরো কয়েকজন নারীকে নিয়ে একটি দল গঠন করলেন, তারা বউকে মারধর করার ঘটনার ওপর নজরদারি শুরু করলো। তাদের হাতে থাকতো বাঁশের লাঠি। তিনি জানতেন জোটবদ্ধ হলে বাইরের কারও কোনো সাহায্য লাগবে না। যখন একজন নারী একা কিছু করতে পারবে না, হাজার নারী তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে এমনটায় বিশ্বাস করেন সাম্পাত।
২০০৫-০৬ সালের দিকে সাম্পাত পাল দেবী নারীর অধিকার রক্ষায় ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের প্রত্যন্ত ওই গ্রামে ‘গুলাবি গ্যাং’ গঠনটি শুরু করেন। গ্রামে যারা স্ত্রীদের মারধর করতো, নারীদের উত্যক্ত করতো, ধর্ষণ করতো, তাদের বিরুদ্ধে বা এলাকার দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ‘গুলাবি গ্যাং’। তাদের সদস্যরা রীতিমত লাঠি-সোটা নিয়ে মারপিট করতো। বর্তমানে এ সংগঠন দেশের বহু জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে, যাদের সদস্যরা মূলত গৃহবধূ, পরনে থাকে গোলাপি রংয়ের শাড়ি, হাতে লাঠি। তাদের নিয়ে বলিউডে একটি চলচ্চিত্র পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে।
‘গুলাবি গ্যাং’এর প্রতিষ্ঠাতা সাম্পাত পাল দেবীর জন্ম ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের প্রত্যন্ত বুন্দেলখান্ডে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিজেই গান বাধতেন সাম্পাত। সাম্পাত দেবী চাইলেন এই সংগঠনের নারীদের যেন মানুষজন আলাদাভাবে চিনতে পারে। এরপর পোশাকের জন্য একটি রং বাছলেন তারা। মেয়েদের কাছ থেকে এক রুপি করে চাঁদা নিয়ে কানপুর থেকে শাড়ি অর্ডার করলেন। দেখলেন একমাত্র গোলাপি রং কোনো রাজনৈতিক দল এখনো ব্যবহার করছে না। প্রথমেই পাঁচশো গোলাপি রংয়ের শাড়ি অর্ডার করলেন। তখন থেকেই এই সংগঠনকে বলা শুরু হয় ‘গুলাবি গ্যাং’। গুলাবি গ্যাংয়ের আন্দোলনের ফলে অপরাধী এবং প্রভাবশালী একজন স্থানীয় রাজনীতিকের বিচার হয় এবং তার ১০ বছর কারাদণ্ড হয়। শুধু ঘরে সহিংসতাই নয়, গুলাবি গ্যাং সমাজের অন্যান্য অনাচার যেমন বাল্য বিবাহ এবং সতীদাহের মত অনাচারের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদে তৎপর হয়।
২০১০ সালে আবারো গুলাবি গ্যাং খবরে আসে। স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনীতিক অল্প বয়সী একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে এবং তারপর তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনে। প্রতিবাদে গুলাবি গ্যাংয়ের সদস্যরা স্থানীয় জেলখানার সামনে টানা ১১ দিন ধরে অবস্থান নেয়। তাদের দাবি ছিল মেয়েটিকে মুক্তি দিয়ে আসল অপরাধী পুরুষোত্তম দিবেদিকে ধরে বিচার করতে হবে। পরে ঐ রাজনীতিকের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। ওই কয়েকদিনে ১০ হাজার মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিল। গুলাবি গ্যাংয়ের কার্যক্রম এখন ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তাদের প্রধান তৎপরতা ভারতের উত্তর প্রদেশে এখনও অব্যাহত রয়েছে।