বিশ্বাসেই ব্যবসা চলে শ্যামবাজারে

দোকানের কর্মচারী থেকে অনেকেই হয়েছেন আড়তের মালিক। আবার বড় বড় ব্যবসা হারিয়ে অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব। কোন চালানে লাভ তো কোনটায় লোকসান- এমন নানা চড়াই-উৎড়াইয়ের মধ্যেই দেড়শ বছর ধরে টিকে আছে পুরান ঢাকার শ্যামবাজার। এই বাজারে ব্যবসা করতে কোন জামানতের দরকার হয় না। সততা ও বিশ্বাসের ওপর ভর করে মুঠোফোনে প্রতিমাসে কয়েকশ কোটি টাকার পণ্য লেনদেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।

রাত যত গভীর হয় শ্যামবাজারে বাড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের আনাগোনা। পেঁয়াজ, রসুন-আদা খালাসে আড়তগুলোতে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেন শ্রমিকরা। আবার ভোরের দিকে আড়তের কপাট খুলতেই হাঁকডাক বাড়ে আমদানিকারক, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের। প্রায় দেড়শ বছর ধরে এভাবেই চলছে ঢাকার শ্যামবাজার। সময়ের পরিক্রমায় এই বাজার কাউকে দিয়েছে দুহাত ভরে। কাউকে করেছে নি:স্ব।

ব্যবসায়িক উত্থান-পতনের চলমান গল্পের কথা শোনালেন মেসার্স আলী টেড্রার্সের স্বত্ত্বাধিকারী শামসুর রহমান। তিনি জানান, রাজধানীর অন্যতম বড় এই পাইকারি বাজারে চাকরি করতে এসেছিলেন। প্রথম দুই মাস এখানে পেটে-ভাতে কাজ করেছেন। এরপর তার কর্মদক্ষতা ও তৎপরতায় আড়ত মালিক সন্তুষ্ট হয়ে তাকে সুযোগ দেয়। তারপর থেকে তিনি নিজেই ব্যবসা শুরু করে এখন পর্যন্ত করে যাচ্ছেন।  

শ্যামবাজারে, আমদানিকারকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে ব্যবসা করেন অনেকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্য সরবরাহ করেন ফড়িয়ারাও। এসব পণ্য বিক্রি হয় কমিশনে। পণ্যভেদে কমিশন ভিন্ন। প্রতিকেজি পেঁয়াজে ৬০ পয়সা; আর আদা-রসুনে এক টাকা করে কমিশন পান আড়তদাররা।

একজন আড়ৎমালিক জানালেন, এখানে কেউ কাউকে চেনে না। ব্যবসাটা টিকে আছে আসলে বিশ্বাসের ওপরে। এই যে দুই গাড়ি মাল নামছে, দুই গাড়িই বিক্রি করে দিয়েছি ফোনেই।

শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির হিসেবে বর্তমানে শ্যামবাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ দোকান রয়েছে। প্রতিমাসে এই বাজারে প্রায় তিনশ কোটি টাকার পেঁয়াজ-আদা-রসুনসহ অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্য বেচাকেনা হয়।