নভেল করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠছে বাংলাদেশ। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। এজন্য কূটনৈতিক তৎপরতার দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা।
কাঁচামালসহ অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা চীন। দেশের রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয়। করোনা পরিস্থিতির শুরুতে এই নির্ভরশীলতায় ছেদ পড়ায় বড় ধরনের চাপে পড়েছিল বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে সৃষ্ট স্থবিরতা বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠছে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীনের শিল্প কারখানাগুলো এখন সচল, তাই অনেকটাই স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে এক হাজার ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি। যদিও দেশটিতে এখনো বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ খুবই সামান্য। তবে বাংলাদেশ চীনের বাজারে আট হাজারেরও বেশি সংখ্যক পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে, যে সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপরতা বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।
বাংলাদেশ চীন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির যুগ্ম মহাসচিব আল মামুন মৃধা বলছেন, ‘আমাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি এক্সপার্টিজের ঘাটতি থেকেও থাকে এবং সেজন্য আমাদের পণ্যের কস্টিং যদি বেশিও হয়ে থাকে, এই শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের কারণে আমরা একটা কমপিটিভ পর্যায়ে চীনে প্রবেশ করতে পারব।’
সম্প্রতি চীনের নেতৃত্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৫টি দেশের মধ্যে রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) জোট গঠন হয়েছে। বড় এই মুক্ত বাণিজ্য জোটে নেই বাংলাদেশ। কিন্তু এই জোটের অংশ হয়েছে কম্বোডিয়া, মিয়ানমারের মতো স্বল্পোন্নত কয়েকটি দেশ। তবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। যথাযথ তৎপরতায় চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিকল্প দেখছেন না অর্থনীতিবিদেরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার কিন্তু আরসিইপি সদস্য হিসেবে চীনে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধাটা পাবে। সেজন্য বাংলাদেশকে এখন থেকেই চীনের সঙ্গে একটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলাপ-আলোচনা করতে হবে, যাতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরেও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধাটা পাওয়া যায়, সেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যকার বিসিআইএম ইকোনমিক করিডোরের দ্রুত বাস্তবায়নেও বাংলাদেশের তৎপরতা আরো বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।